সুন্দরবন এখন মহিষ বিচরণের অভয়ারন্য, ছড়াতে পারে এ্যানথ্রাক্স রোগের জীবানু

0

নজরুল ইসলাম আকন, শরণখোলা(বাগেরহাট)॥ সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ মহিষ বিচরনের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। সংরক্ষিত বনে বছরজুড়ে শত শত মহিষ বিচরনের ফলে হুমকির মুখে রয়েছে বনের বাঘ- হরিণ সহ জীব-বৈচিত্র। অর্ধ সহাস্রাধিক মহিষ সারা বছর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রেঞ্জের বগী, সুপতি ও ধানসাগর ষ্টেশন এলাকার সুন্দরবন। এতে বন্য প্রানীদের আবাস্থল যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ পায়ে দলে এবং খেয়ে ধ্বংস করছে বন। আতংকে রয়েছে বন্যপ্রানীরা।


সুন্দরবন সহ- ব্যাবস্থাপনা কমিটির ( সিএমসি) শরনখোলা উপজেলার কোষাধ্যক্ষ মোঃ ফরিদ খান মিন্টু , সিপিজির স্থানীয় গ্রুপ লিডার খলিলুর রহমান, সুন্দরবনের পর্যটন ব্যাবসায়ী রাসেল বয়াতী জানান, পুর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বগী, সুপতি ও ধানসাগর ষ্টেশন এলাকায় ৫ শতাধিক মহিষের বিচরণ ভাবিয়ে তুলেছে বন সুরক্ষা কমিটির লোকজন সহ স্থানীয় সচেতন মহলকে। গত প্রায় এক যুগ ধরে সুন্দরবন সংলগ্ন পাথরঘাটা,মঠবাড়িয়া,শরণখোলা,মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রায় অর্ধশত মহিষ মালিক ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে বনে মহিষ পালন করে আসছে। এসব মহিষ বিচরনের ফলে বনের ব্যাপক ক্ষয়- ক্ষতি হচ্ছে। প্রাকৃতিক এ বনের গাছ থেকে ফল পড়ে গজানো চারাগাছ পায়ে নীচে পিশে নষ্ট করছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডাল- পালা, লতা-পাতা খেয়ে সাবার করছে। এ ছাড়া দলবদ্ধ মহিষের ভয়ে বাঘ- হরিন সহ অন্যান্য বন্যপ্রানীরা এ বনাঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ তফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, মহিষের মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রানীকূলের মাঝে ভয়াবহ এ্যানথ্রাক্স বা তর্কা রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে যা বৃহত্তর এ ম্যানগ্রোভ বনকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে। ওয়াইল্ড টীমের শরনখোলা প্রতিনিধি মোঃ আলম হাওলাদার জানান, ইউনেস্কো ঘোষিত আন্তর্জাতিক এ বনের প্রধান প্রানী বাঘ,হরিণ, কুমির ও শুকর হলেও সেখানে যত্রতত্র দেখা মিলছে এখন মহিষের। যা রিজার্ভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের ভাবমুর্তী সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে । স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ রাজ্জাক হোসেন দীপু, মুক্তিযোদ্ধা রুস্তুম আলী খান জানান, বনবিভাগের সহায়তা ছাড়া বনে মহিষ অবস্থান করা সম্ভব নয়। তাদের সহায়তা নিয়েই মহিষ মালিকেরা বনে মহিষ পালনের সুযোগ পাচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, মহিষ বিতারণ করে বন রক্ষা করতে হলে বনবিভাগকে আরও তৎপর হতে হবে। খোয়াড়ে দিয়ে বা মামলা দিয়ে বন থেকে মহিষ সরানো যাবেনা। বন থেকে মহিষ সরাতে হলে বনের মহিষ আটক করে নিলামে দেয়ার আইন পাশ করতে হবে। শরণখোলা রেঞ্জের বগী ষ্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সাদিক মাহমুদ জানান, কিছু মহিষ মালিক কৌশলে সুন্দরবনের মধ্যে মহিষ ছেড়ে দেয়। আমরা অনেক মহিষ মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। মহিষ ধরে খোয়াড়ে দিয়েছি। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছেনা। আর মহিষ অত্যান্ত দুরন্ত শক্তিশালী তাদেরকে সহজে ধরা যায়না। মহিষ নিলামের ব্যাবস্থা থাকলে আমাদের জন্য ভালো হতো। ভয়ে মালিকেরা বন থেকে মহিষ সরিয়ে নিতো।