আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা : শেয়ার বাজারের ১৫ হাজার কোটি টাকা হাওয়া

0

গোলাম মওলা॥ বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখোমুখি অবস্থানের কারণে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যার ফলে গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পুঁজিবাজারে টানা পাঁচ দিনই দরপতন হয়েছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) ডিএসইতে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৬৫ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ২২১ পয়েন্ট। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনালী ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করেছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর তাতে আবারও দরপতনের বৃত্তে আটকা পড়েছে পুঁজিবাজার।
বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে গেলো সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। এতে ডিএসই বাজার মূলধন প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর আগে টানা দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল। সে হিসাবে দুই সপ্তাহে যে পরিমাণ বাজার মূলধন বেড়েছিল, এক সপ্তাহেই তার থেকে বেশি কমলো। বাজারের তথ্য বলছে, মূলধন কমার পাশপাশি সবকটি মূল্যসূচকও কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গেলো সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেলো সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৪ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৩টির। আর ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩৯ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৯৫ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৮৯ দশমিক ২১ পয়েন্ট। বাজারের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ-ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩৭ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল দুই দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১৫ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট। এছাড়া বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা দুই সপ্তাহ বাড়ার পর গেলো সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৯২ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৭৬ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় এক হাজার ৩৯৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৩৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। বাজারের তথ্য বলছে, সর্বশেষ সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ছয় হাজার ৩০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ছয় হাজার ৯৯২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৬৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।