শার্শায় সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যশোর-১ শার্শা আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ শেখ আফিল উদ্দীন সংসদ সদস্য হওয়া সত্বেও এলাকায় উপস্থিত থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন। তবে তার রোষানলের ভয়ে কেউ নির্বাচন অফিসে লিখিত আবেদন করতে সাহস পাচ্ছেন না। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর বাইরে তাদের পক্ষে কিছুই করার নেই।
আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে যশোরের তিনটি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে বাঘারপাড়া উপজেলায় ৯ টি, মনিরামপুর উপজেলায় ১৬ টি ও শার্শা উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়ন রয়েছে। শার্শার ১০ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন মোট ১৫ জন। এরমধ্যে কোনো ইউনিয়নে ৪/৫ জন করে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে ওই উপজেলার ইউপি নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমনে খোদ সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন নিজেই নির্বাচনে সরাসরি নেমে পড়েছেন। দলের প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত প্রচার সভায় তিনি সরাসরি অংশ নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শার্শার ডিহি ইউনিয়নের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন এখন বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে মিশনে নেমেছেন। তিনি আমার সাথেও ফোনে কথা বলে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নৌকাকে সমর্থন দিতে চাপ দিচ্ছেন। তবে আমি নির্বাচন থেকে সরে যাবো না। এটি আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।’
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ২২ নভেম্বর সোমবার বিকেলে শার্শার সোনালী ব্যাংকের সামনে নৌকার প্রতীকের পক্ষে এক কর্মী সমাবেশে সরাসরি অংশ নেন সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন। ওই সভায় শার্শা ইউনিয়নের দলের মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী সোহরাব হোসেন উপস্থিত হয়ে নৌকাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এসময় তিনি সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীনের অনুরোধে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বক্তব্যে বলেন। ওই কর্মীসভায় প্রধান অতিথি শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভিতর কোনো কোন্দল, হানাহানি, মারামারির ঘটনা ঘটুক সেটা আমি চাই না। তাই সোহরাবকে বুঝিয়ে দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৌকাকে বিজয়ী করতে সকল ভেদাভেদ ভুলে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে নৌকায় ভোট দিতে হবে।’ এদিকে সংসদ সদস্য হয়ে সরাসরি ইউপি নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত সভায় অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এটিকে সংসদ সদস্যর নির্বাচনবিধি লঙ্ঘনের শামিল বলে দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল খালেক বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে উনি এটি করতে পারেন না। কেননা এ বিষয়ে নির্বাচন বিধিমালায় প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্যর অবস্থান নেয়ার কারণে একদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেমন বিব্রত হচ্ছেন, তেমনি ভোটারদের মাঝে প্রভাব পড়ছে। ফলে নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘সোমবার সোনালী ব্যাংকের সামনে ওই সভা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহরাব হোসেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং ওই সভায় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন ঠিক, তবে সভাটি কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভা ছিল না। সংসদ সদস্যের উপস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিক সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা সমাগম হয়ে যায়।’ রাতে এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য ইউপি নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি, সভা-সমাবেশে অংশ নিতে পারবেন না। তবে সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন এমন কোনো কাজ করেছেন কিনা আমার জানা নেই। অবশ্যই এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীনের মোবাইল ফোনে (০১৭১১৫২৪৫৬০) কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।