শেষ বলে তৈরি হলো বিতর্ক

0

মেজবাহ্-উল-হক॥ শেষ বলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ২ রান। এক রান হলে ম্যাচ টাই হয়ে যাবে। তখন খেলতে হবে সুপার ওভার। আর কোনো রান নিতে না পারলে জিতে যাবে বাংলাদেশ। ওভারের প্রথম পাঁচ বলে তিন উইকেট নিয়ে দারুণ উজ্জীবিত বোলার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট হাতে প্রস্তুত পাকিস্তানের মোহাম্মদ নেওয়াজ। শ্বাসরুদ্ধকার এক পরিস্থিতি। স্টেডিয়ামে তখন যেন পিনপতন নীরবতা। হার্টের গতি বাড়তে শুরু করে। মাহমুদুল্লাহ দারুণ এক ডেলিভারি দিলেন। বল গিয়ে আঘাত করল স্ট্যাম্পে। গর্জে উঠল পুরো স্টেডিয়াম। কিন্তু পরে দেখা গেল মাঠে আম্পায়ার তানভীর আহমেদ কোনো সংকেত দেননি। তার মানে ‘আউট’ না!
মাহমুদুল্লাহ ডেলিভারি দেওয়ার পর বল যখন পিচে ড্রপ করল ঠিক ন্যানো সেকেন্ডের ব্যবধানে নিজেকে সরিয়ে নিলেন ব্যাটসম্যান নেওয়াজ। পাক ব্যাটসম্যান হয়তো বুঝতে পারছিলেন এই ডেলিভারিতে তিনি সুবিধা করতে পারবেন না। সে কারণেই কৌশলের আশ্রয় নিলেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানকে সমর্থন করে ওই বলটি ‘ডেট’ ঘোষণা করলেন ফিল্ড আম্পায়ার। বলটি ফেয়ার ছিল কিনা না তা নিয়ে সংশয় শুরু হয়ে গেল। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মাঠের আম্পায়ারের কাছে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু ততটা জোরাল ছিল না। সে কারণেই কিনা থার্ড আম্পায়ার পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি পৌঁছাল না। এমনটি মাঠের আম্পায়ার তানভীর আহমেদ এমন একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তখন লেগ আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাঠের আরেক আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনও মনে করেননি।
এ নিয়ে তৈরি হয়ে যায় বিতর্ক! এমন পরিস্থিতিতে আম্পায়ার কি আউট দিতে পারতেন না? আম্পায়ারের অভিধানে কি লেখা আছে! আম্পায়ার সরফুদৌল্লা সৈকত বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ারের স্বাধীনতা আছে। তিনি চাইলে যেকোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। চাইলে আউট দিতে পারতেন।’ তবে ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহর আবেদন জোরাল না হলেও উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ম্যাচ শেষে টাইগার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘ব্যাটসম্যান একদম শেষ মুহূর্তে সরে গেছেন। আমরা আম্পায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলটি বৈধ্য কিনা! এরপর আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।’ গতকাল শেষ ওভারে জয়ের পাকিস্তানের দরকার ছিল ৮ রান। কিন্তু কার হাতে বল তুলে দেবে ক্যাপ্টেন। পরাজয় যেন অনেকটাই নিশ্চিত। কোনো উপায়ন্তর না দেখে নিজেই বল হাতে তুলে নিলেন মাহমুদুল্লাহ। প্রথম বলটি দেন ডট। দ্বিতীয় বলে বোকা বানালেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে। এরপর পাকিস্তানের দরকার ৪ বলে ৮ রান। পরের বলেই ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান হায়দার আলীকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিলেন। ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন পাক ব্যাটসম্যান। দুর্দান্তভাবে পুল করেছিলেন হায়দার। কিন্তু বল বাউন্ডারি সিমানা পার করতে পারেননি। লং অনে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচটি লুফে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ ৩ বলে পাকিস্তানের দরকার ৮ রান। ম্যাচ যেন বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পড়েছে অনেকটাই। কারণ, উইকেটের দুই প্রান্তেই তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। দারুণ একটা সুযোগ। কিন্তু চতুর্থ বলে ইফতেখার আহমেদ স্টেট ড্রাইভে ছক্কা হাঁকালেন। কিন্তু তখনো রোমাঞ্চ ছিল বাকি। কারণ, পরের বলেই ইফতেখারকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিতে বাধ্য করেন মাহমুদুল্লাহ। ৪ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নেই। আর তিনটিই ক্যাচ। এবার আর ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। এরপর শেষ বলের সেই মহানাটক! ওভারের শেষ বলটি মোহাম্মদ নেওয়াজের চতুরতার জন্য ‘ডেট’ দেন আম্পায়ার। তারপর যেন নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন ক্যাপ্টেন। এরপর যে বলটি করলেন, ডেলিভারিটি ঠিকঠাক হলো না। সহজেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন নেওয়াজ। গতকাল প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১২৪ রান করেছিল বাংলাদেশ। মোহাম্মদ নাঈম খেলেছেন ৫০ বলে ৪৭ রানের ইনিংস। এছাড়া শামীম ২২ এবং আফিফের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। ১২৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেটে জয় পায় পাকিস্তান। টি-২০ সিরিজ ৩-০ ব্যবধানেই জিতল সফরকারীরা। কালকের ম্যাচে ৩৮ বলে ৪৫ রান করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হায়দার আলী। সিরিজ সেরা হয়েছেন পাকিস্তানের ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। সিরিজটি ২-১ হতে পারত। কিন্তু শেষ ম্যাচের শেষ বলের বিতর্কের কারণে অন্যরকম হয়ে গেল!