শার্শায় নির্বাচনী সহিংসতায় ৩ জন গুলিবিদ্ধ-ভাঙচুর, আতঙ্কে ভোটার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত যশোর শার্শা উপজেলার গোগা ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার সকালে নৌকার প্রতীকের কর্মীদের হামলায় আনারস প্রতীকের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) ২ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর আগে বুধবার রাতে উলাশীতে গুলিবিদ্ধ হন নৌকা প্রতীকের একজন সমর্থক। এ নিয়ে উভয় ইউনিয়নে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শার্শার গোগা ইউনিয়নের পাঁচভুলোট স্কুল মাঠে আনারস প্রতীকের কর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হচ্ছিল।

এ সময় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রশিদের কর্মী সাবুর বদ্দি, জিল্লুর রহমান, আনছার আলী বদ্দী, সুজন বদ্দীসহ ২০/২৫ জন পিস্তল ও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের গুলিতে জখম হন আনারস প্রতীকের কর্মী আশরাফুল ও ফজের আলী। তাদেরকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  গোগা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস প্রতীক) তবিবর রহমান বলেন, তার বিজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশিদ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। যে কারণে নির্বাচনে তাকে ঘায়েল করতে তারা ইউনিয়নে সন্ত্রাস করছে। তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে পরিকল্পিতভাবে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা পাঁচভুলোট বাজারে তার অফিস ভাঙচুর করে। এ সময় তারা প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছেড়ে। এতে তার কর্মী আশরাফুল বুকে ও ফজের আলীর পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি আরও জানান, প্রতিপক্ষরা তার গোগা ও পাঁচভুলোট বাজারে আনারস প্রতীকের অফিস ভাঙচুর করেছে। তার কয়েকজন কর্মীর দোকানে তালা মেরেছে। অনেকের বাড়িঘরও ভাঙচুর করেছে নৌকার সমর্থকরা। এ ব্যাপারে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রশিদ বলেন, অভিযোগ সত্য নয়।


উলাশীর নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত বুধবার সকালে উলাশী ইউনিয়নের কন্যাদাহ বাজারে নৌকা প্রতীকের গণসংযোগ ও সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। এ দিন সকাল থেকে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আয়নাল হক কন্যাদাহ বাজারের সকল দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। বাজারের পানি টিউবওয়েল পর্যন্ত খুলে রাখেন। যাতে নৌকা প্রতীকের কোন কর্মী-সমর্থক পানি খেতে না পারে। এ ঘটনায় নৌকা প্রতীকের ক্ষুদ্ধ কর্মীরা উলাশী বাজারে ফিরে এসে রামপুর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নজুকে মারপিট এবং উলাশী বাজারে আনারস প্রতীকের অফিস ভাঙচুর করে। তিনি বলেন, এ ঘটনার জের ধরে বুধবার রাতে চেয়ারম্যান আয়নাল হকের ছেলে, ভাইপো ও সমর্থকরা ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডে সহিংসতা চালায়। তারা ইউনিয়নের ধলদা, রামেরডাঙ্গা, রামপুর, লাউতাড়া গ্রামে নৌকা প্রতীকের ৫টি অফিস ভাঙচুর করে। কুপিয়ে আহত করে আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম কওছার (৮০) কে। গুলি চালিয়ে আহত করে নৌকা প্রতীকের কর্মী জয়নাল আবেদীনকে। এ ব্যাপারে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আয়নাল হক জানান, বুধবার দিনদুপুরে উলাশী বাজারে তার আনারস প্রতীকের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। কুপিয়ে জখম করা হয়েছে রামপুর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নজু ও আব্দুস ছাত্তার নামে তার কর্মীকে। তিনি বলেন, তার কোন কর্মী ও সমর্থক নৌকা প্রতীকের কোন অফিস ভাঙচুর করেনি। কাউকে মারপিট ও গুলি করেনি। তিনি বলেন, প্রশাসনের চাপে তার কর্মী ও সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারছে না। তার বিজয় নিশ্চিত জেনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে এসব ঘটনায় গোগা ও উলাশী ইউনিয়নে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটাররা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শার্শা থানা পুলিশের ওসি বদরুল আলম খান বলেন, গোগা ও উলাশীর ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ না থাকলে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারতো। গোগা ও উলাশী ইউনিয়নের বাজারগুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলেন জানান তিনি। উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর শার্শা উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। যে কারণে প্রতিদিন কোনো না কোনো ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।