ধুঁকছে কমলাপুরের রেলওয়ে হাসপাতাল

0

ইয়াসির আরাফাত রিপন॥ সাধারণত জেনারেল হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা মেলে। থাকেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। কিন্তু রাজধানীর কমলাপুরের রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালটির চিত্র ভিন্ন। এটি শুধু নামেই জেনারেল হাসপাতাল। কার্যত হাসপাতালটি নিজেই ধুঁকছে নানা সমস্যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ে কর্মচারী ও সাধারণ মানুষকে আধুনিকসেবা দিতে পাঁচ বছর আগে হাসপাতালটি উন্নত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই মধ্যে দীর্ঘ সময় পেরোলেও কার্যকরভাবে শুধু নাম ছাড়া তেমন কিছুই পরিবর্তন হয়নি। এই হাসপাতাল থেকে রোগীর জন্য মাত্র তিনদিনের ওষুধ সরবরাহ করা যায়। অথচ অন্য হাসপাতাল দিতে পারে সাতদিনের ওষুধ।

তবে সংকট দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমানে এ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া নেই কোনো ব্যবস্থা। আছে চিকিৎসক ও ওষুধ সংকট। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটার ও ল্যাব। রেলওয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সেনাবাহিনী-পুলিশ কিংবা বিজিবি হাসপাতালে রয়েছে আধুনিকসেবা। কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব আর ওষুধ সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে এখানে। ওষুধ না পাওয়ায় আসছেন না তেমন রোগী। যদিও সেবার মানোন্নয়নের চেষ্টা চলছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব আর ওষুধ সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে সেবার আগে বাজেট, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন।


সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে জানা যায়, প্রথম দিকে হাসপাতালটি শুধু রেলওয়ে কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য ছিল। পরে ২০১৫ সালে জনসাধারণের সেবায় এটি উন্মুক্ত করা হয়। একই বছরে এটিকে উন্নীত করা হয় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। গত বছর দেশে করোনাভাইরাস তীব্র আকার ধারণ করলে এটিকে কোভিড ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়। সংক্রমণ কমে এলে হাসপাতালটির করোনা ইউনিট বন্ধ করে তা সাধারণ রোগীদের জন্য আবারও উন্মুক্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঁচ একর জায়গার ওপর নির্মিত হাসপাতালটির পেছনে মাসে ব্যয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসেন ২০০ এর কম রোগী। হাসপাতালের বেড অধিকাংশ সময় খালি থাকে। পাওয়া যায় না ভর্তি রোগী। এর কারণ হিসেবে রেলওয়ে কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, হাসপাতালটিতে ভালো কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। যারা আছেন তাদের আন্তরিকতা থাকলেও সংকট যেন পিছু ছাড়ে না হাসপাতালটির। পর্যাপ্ত ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় কোনো রোগীকে তিনদিনের বেশি ওষুধ দেওয়া যায় না। অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকায় হয় না অস্ত্রোপচার।

তবে গরিব-অসহায় রোগীরা চিকিৎসা নিতে এলে বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে, চিকিৎসকরা নিজ উদ্যোগে সেই রোগীর অস্ত্রোপচার করেন। এদিকে অপ্রতুল চিকিৎসকের সঙ্গে কমলাপুরের রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে বড় সংকট ল্যাব বা পরীক্ষাগার। এখানে যে ল্যাব আছে তা বলতে গেলে বন্ধ। এখন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। বহুদিন ধরে পড়ে আছে এক্স-রে মেশিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। কথা হয় রেলওয়ে কর্মচারী মাহবুবের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ হাসপাতালটিই আমাদের ভরসা। তবে এখানে এলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। ওষুধ দেওয়া হয় কম, বলে সংকট আছে বা ওষুধ নেই। সেবা না থাকায় বাইরের গরিব রোগীও আসতে পারেন না। সরকারের উচিত হাসপাতালটির দিকে নজর দেওয়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো সংস্থার অধীনে জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে যে ধরনের চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন, যেমন- আর্মি বা পুলিশ হাসপাতাল, এগুলো থেকে বহুগুণ পেছনে রেলওয়ে হাসপাতাল। লোকবল আর যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলে এটা হবে আধুনিক মানের হাসপাতাল।


এ নিয়ে কথা হয় কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের অতিরিক্ত বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তুহিন বিনতে হালিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, রেলওয়ে কর্মচারীদের পাশাপাশি জনসাধারণকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এখানে ভালো কনসালট্যান্ট এলেও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তারা পরে চলে যান। তিনি আরও জানান, এ হাসপাতাল থেকে রোগীর জন্য মাত্র তিনদিনের ওষুধ সরবরাহ করা যায়। অথচ অন্য হাসপাতাল দিতে পারে সাতদিনের ওষুধ। তবে সংকট দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ডা. তুহিন বিনতে হালিম বলেন, আউটডোর-ইনডোরে রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে। ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট আছে, যা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। রেল দুর্ঘটনায় আহত কর্মচারী বা যাত্রীকে এখানে দেওয়া হয় প্রাথমিকসেবা। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় কনসালট্যান্সির সেবা দেওয়া হয় না। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও গাইনি, অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি কনসালট্যান্ট না থাকায় সেবা দেওয়া যায় না বলে জানান হাসপাতালের এ অতিরিক্ত বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সেবার আগে বাজেট, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি বা পদায়ন করা হলে জনগণকে আরও আধুনিকসেবা দেওয়া সম্ভব।