যশোর শিক্ষা বোর্ডে ধরা পড়লো আরও ১২টি চেক জালিয়াতি: ৩৮টি চেকে ৭ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ এখনো জমা পড়েনি তদন্ত রিপোর্ট

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শিক্ষা বোর্ডে আরও ১১টি চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এই জালিয়াতির মাধ্যমে জালিয়াত চক্রটি প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ নিয়ে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের অ্যাকান্ট থেকে ৭ কোটির বেশি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
এদিকে, নতুন ১২টি চেক জালিয়াতি ধরা পড়ার প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটিকে তদন্তের স্বার্থে সময় বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন চেক জালিয়াতির সাথে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের নামও শোনা গেছে। শিক্ষা বোর্ড সূত্র মতে, গত ৭ অক্টোবর প্রথমবারের মতো ৯টি চেক আড়াই কোটি টাকার জালিয়াতি ধরা পড়ে। পরে একই মাসের ১১ তারিখে একটি চেক প্রায় ১৬ লাখ টাকা এবং ১৮ তারিখে ১৬টি চেকে প্রায় ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। সর্বশেষ চলতি মাসের ৯ তারিখ সন্ধ্যায় আবারো ১২টি চেক জালিয়াতির ঘটনা উদ্ধার করে বোর্ডের উপ-পরিচালক পরিচালক (হি ও নি) এবং অডিটর। এই চেকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকা বোর্ডের অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করে ভাগাভাগি করে নেয় জালিয়াত চক্র। সর্বশেষ ধরা পড়া চেক জালিয়াতির সাথে শহরের একটি বহুল পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত প্রেসের নামও যুক্ত হয়েছে বলে বোর্ড সূত্র দাবি করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টে আড়াই লাখ টাকার বিলের বিপরীতে ১০ লক্ষাধিক টাকা জমা হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। এছাড়া বোর্ডের হিসাব সহকারী আব্দুস সালামের টিএ বিল, নূর এন্টারপ্রাইজের একাধিক চেকও রয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিকবার শিক্ষা বোর্ড সচিবকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে বোর্ডে গেলে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধাও দেয় গেটে। এক পর্যায়ে সচিব এএমএইচ আলী আর রেজার সাথে দেখা করলেও নতুন উদ্ধার হওয়া চেক সংখ্যা বা টাকার পরিমাণ কোনো কিছুরই তথ্য দিতে রাজি হননি। নতুন চেক জালিয়াতির ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর জানান, এখনো অনুসন্ধান চলছে, এ পর্যন্ত মোট ৩৮টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে জালিয়াতচক্রটি। তিনি বলেন, এই চেকগুলি বেশ কয়েকটা আগের চেয়ারম্যান, সচিবের সময় হয়েছে, কয়েকটি তবিবর রহমানসহ বর্তমান সচিবের সময়ে হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে দাবি করেন, যার আমলেই হোক পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জালিয়াত চক্র ধরা হোক, শিক্ষা বোর্ড দুর্নীতিমুক্ত হোক। এক প্রশ্নের জবাবে বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, আত্মস্বীকৃত অপরাধী ও যেসব অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়েছে তাদেরকে ধরে রিমান্ডে নিয়ে বা জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, সরকার আইন প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করলে সব টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব। তবে সবশেষ পাওয়া চেকের তথ্য তিনি সম্পূর্ণ দিতে পারেননি। তার মতে, ওগুলো পাওয়ার পরই বোর্ডের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ও দুদকে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ৭ অক্টোবর প্রথমবারের মতো চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর ৯ অক্টোবর কলেজ পরিদর্শক কেএম রববানীকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তাদেরকে এ কাজের জন্যে ৭ দিন সময় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালামকে না পাওয়া দুই দফায় নতুন চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ায় ৩ দফা সময় বৃদ্ধি করা হয় তদন্ত কমিটিকে। সে অনুযায়ী গত সোমবার ৮ নভেম্বর তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। অভ্যন্তরীণ কাজ সম্পন্নের জন্যে মঙ্গলবার তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুতি হচ্ছিল। ঠিক সে সময় (ওই দিন বিকেলে) আরও ১২টি চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এ প্রেক্ষিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটির অনুরোধে আরও ৩ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করে। এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, আগামী রবিবার আশা করা যায়, তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তিনি সোমবার এ সব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। এদিকে, আবারো চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ায় শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তারা জানান, শিক্ষা বোর্ডকে দুর্নীতিমুক্ত করা উচিত। এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের সিবিএ নেতা আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, কে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলো বা কোন চক্র কাজ করলো এটি প্রশ্ন নয়। জড়িত সকল অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক, অভিযুক্তদের সম্পত্তি ক্রোক করে হলেও বোর্ডের টাকা বোর্ডে ফেরত আনা হোক এবং জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে বরখাস্ত করে শিক্ষা বোর্ডকে দুর্নীতিমুক্ত করা হোক।