বিদ্যুতের তারে শিশু আহত: চিকিৎসার খরচ জানতে চান হাইকোর্ট

0

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা॥ সাতক্ষীরায় পল্লী বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে হাত-পা হারানো শিশু রাকিবুজ্জামানের চিকিৎসায় কত খরচ হবে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। তার কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে এবং কত টাকা খরচ হতে পারে তার একটি সম্ভাব্য খরচের তথ্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে জানাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি অঙ্গ হারানো শিশু রাকিবুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করা বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দেওয়ার জন্য সেখানকার অফিসের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি বিশেষ বার্তায় বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের জানাতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে আরও শুনানির জন্য আগামী ১৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। আইনজীবী মো. তাজুল ইসলাম আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন। রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তাজুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহম্মদ তারিকুল ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। এ সময় শিশুটির বাবা ও বোনও উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় রাকিবুজ্জামান নামের সাত বছর বয়সী এক শিশুর বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ দূর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রভাবশারী মহলের চাপে সেখানকার বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা রাকিবুজ্জামানের বাড়ির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানেন। ওই সময় বিদ্যুতের তাড়ে জড়িয়ে শিশুটির ডান হাত, পা ও অপর (বাম) পায়ের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়। ঘটনার পর শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে তার হাত ও পা কেটে ফেলতে হয়। পরে তার অঙ্গহানির ঘটনায় রিট আবেদন করা হয়। আজ ওই রিটের শুনানি নিয়ে শিশু রাকিবুজ্জামানের কী ধরনের চিকিসা দিতে হবে, তার চিকিৎসায় কত টাকা খরচ হতে পারে সেটির একটি হিসাব রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না সেটিও জানতে চেয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৮ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত। এর আগে রোববার (৭ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটটি করেন ওই শিশুর বাবা আব্দুর রাজ্জাক ঢালী। রিটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার, জোনাল ম্যানেজার, সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার, প্রকল্প পরিচালক, সাতক্ষীরার ডিসি ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার প্রতাপনগরের মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢালীর বসতবাড়ীর ওপর দিয়ে নকশা বর্হিভূতভাবে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে তার সাত বছরের শিশু রাকিবুজ্জামানের হাড়-মাংস ঝলসে ডান হাত এবং ডান পা এবং বাম পায়ের কিছু অংশ হারিয়েছে। গত মার্চে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নকশা পরিবর্তন ও বিধি-বর্হিভূতভাবে আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতল বাসবভনের ওপর দিয়ে ক্যাপ ও কাভারবিহীন বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করে। এই লাইনে সংযোগ না দিতে পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবর আবেদনও করেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। পরে গত ৯ মে আব্দুর রাজ্জাক ঢালীর ৭ বছরের শিশুপুত্র রাকিবুজ্জামান ওই বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয় এবং এতে তার শরীর ঝলসে হাড়-মাংস খসে পড়ে। রাকিবুজ্জামানকে তাৎক্ষণিকভাবে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ মে রাকিবুজ্জামানের ডান হাত ও ডান পায় হাটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনার ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২৫ মে আব্দুর আব্দুর রাজ্জাক ঢালী সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ক্ষতিপূরণসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিবাদীরা ক্ষতিপূরণ দেননি এবং অন্য কোনো ব্যবস্থাও নেননি। তাই আব্দুর রাজ্জাক ঢালী শত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি হয় আজ। শুনানিতে চিকিৎসার বিষয়ে খরচ জানতে আদেশ দেন আদালত।