যবিপ্রবির ভর্তিচ্ছুরা অস্বচ্ছ আবেদনের ক্ষেত্রে বিষয় ভিত্তিক নম্বর নিয়ে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক নির্দিষ্ট কোনো পয়েন্ট না দিয়ে বাড়তি ফি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) কর্তৃৃপক্ষ। আগামী ১০ নভেম্বর থেকে এ আবেদন গ্রহণ করা হবে। এর ফলে ভর্তির আবেদন করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে অনেক অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও তাদের আপত্তি আমলে নেয়া হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি ইউনিটের অধীনে প্রতিটি বিষয়ে ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষার প্রাপ্ত নূন্যতম নম্বর আগেভাগেই প্রকাশ করা হয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা কে কত পয়েন্টে কোন বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন তা আগেভাগেই নিশ্চিত হতে পারছেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি আবেদনের ক্ষেত্রে পয়েন্ট পজিশন উল্লেখ করলেও আবেদন ফি সম্পর্কিত কোনো তথ্য এখনো প্রদান করেনি। অথচ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যেকোনো ইউনিটের ক্ষেত্রে নম্বর ভিত্তিক কোনো শর্ত না দিয়েই ইউনিট ভিত্তিক ৬৫০ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কোন বিষয়ে কত নম্বর পেলে আবেদন করতে পারবেন এমন বিষয়ে কোনো স্বচ্ছ ধারণা না দিয়েই ইউনিট ভিত্তিক ৬৫০ আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বাড়তি খরচের মুখে পড়ছেন পরীক্ষার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে সুরাইয়া সুমি নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ভোগান্তি কমানোর পরিবর্তে কয়েকগুন বাড়ানো হয়েছে। আমি যবিপ্রবিতে পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষার আগেই ১২শ’ টাকা ফি জমা দিতে হয়। এখন আমি কোন কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছি তা জানিনা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ভর্তির আবেদন করতে প্রতি ইউনিট অনুযায়ী ৬৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সার্কুলার দিয়েছে। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।’ একই কথা বলেন শরিফুল ইসলাম নামে আরেক ভর্তিচ্ছু। তিনি বলেন, ‘আমরাতো আগেই পরীক্ষার ফি বাবদ ১২শ’ টাকা দিয়েছি। এখন কেনো ইউনিট প্রতি ৬৫০ টাকা দিতে হবে। আমরা ভর্তির জন্য আবেদন করলে তখন যদি মেরিট পজিশনে থাকি তাহলে হয়তো এ টাকা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু আমি আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য মেরিট পজিশনে উঠতে পেরেছি কী না তা নিশ্চিত না হয়ে কেনো বাড়তি টাকা দিয়ে আবেদন করবো।’ এদিকে ভর্তিচ্ছুদের প্রাপ্ত নম্বর উল্লেখ না করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। রাশিদুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দীর্ঘদিন ধরেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের তাগাদা দিচ্ছিল তদারকি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরই ধারাবাহিকতায় ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। তবে এখন দেখছি দুর্ভোগ লাঘবের পরিবর্তে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান কোন ইউনিটের কোন সাবজেক্টে কত নম্বর পেয়েছে, কত নম্বর পেলে আবেদন করতে পারবে এমনটি নিশ্চিত না হয়ে সে কীভাবে আবেদন করবে? অনিশ্চয়তায় থেকে একাধিক ইউনিটে আবেদন করতে কত টাকা ব্যয় হবে তা ভাবতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, যাদের সামর্থ আছে তারা একাধিক ইউনিটের জন্য ৬৫০ টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আর যারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান তারাতো আর পারবেন না। কারণ ৭টি অনুষদে যদি কেউ আবেদন করে তার জন্য ৪ হাজার ২শ’ টাকা গুনতে হবে। এভাবে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে কত টাকা লাগবে তা ভেবে দেখার বিষয়। যা একজন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একেবারেই সম্ভব নয়।
যবিপ্রবি সূত্রে জানা গেছে, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ৭টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিট এ-বিভাগ ৭টি ও আসন ২৫০টি, ইউনিট বি-বিভাগ ৪টি ও আসন ১৬০টি, ইউনিট সি-বিভাগ চারটি ও আসন ১৫০টি, ইউনিট ডি-বিভাগ ৩টি ও আসন ১২০টি, ইউনিট ই-বিভাগ ১টি ও আসন ৪০টি, ইউনিট এফ-বিভাগ ৪টি ও আসন ১৭০টি এবং ইউনিট জি-বিভাগ ২টি ও আসন ৪০টি। প্রতিটি ইউনিটের ক্ষেত্রেই একজন ভর্তিচ্ছুকে ৬৫০ টাকা আবেদন ফি দিতে হবে। এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে কোনো পরীক্ষার্থীকেতো আর ফেল দেখানো হয়নি। সবাই পাশ করেছে। ফলে ভর্তিচ্ছুরা আবেদন করার পর আমরা তাদের পূর্বের রেজাল্টের সাথে সমন্বয় করে মেরিট পজিশন নির্ধারণ করবো। ফলে এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু সবাই পাশ করেছে সে কারণে আমি কারোর জন্যতো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ করতে পারিনা। যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারাতো নিজেরাই জানে তাদের নম্বর কত। ফলে কোন পরীক্ষার্থী এখানে আবেদন করতে পারবে আর পারবে না তারা সব ভালো জানে।’