সরকার পতনের লক্ষণ দেখছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশ যখন আন্দোলনের দিকে যায়, আন্দোলন যখন সফলতা পায়, তখন সরকার পতনের সময় ঘনিয়ে আসে। এখন সেই লক্ষণই দেখতে পাচ্ছি। এটা অত্যন্ত ভালো লক্ষণ, অত্যন্ত শুভ লক্ষণ। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-জেটেব আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর সঙ্গে একটি স্বৈরাচারী সরকার সরাসরি জড়িত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, যেখানে একটি দল এবং সরকার একাকার হয়ে যায় সেখানে আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এখন তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারাই লুটপাট করছে, জনগণের ভোট কেড়ে নিচ্ছে, অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। দল-সরকার এক হয়ে গেছে। আজকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাদের দায়িত্ব তারাই লুটপাট করছে। তারা সরাসরি লুটপাটের সঙ্গে জড়িত।
আমির খসরু বলেন, ব্যয়বহুল ইনডেক্সে বাংলাদেশ শীর্ষে, যেমনটা শীর্ষে দুর্নীতি ও পরিবেশ দূষণে। এই যে লুটপাট চলছে, এটা বন্ধ হবার নয়। আজ আসার পথে দেখলাম রাস্তায় একটা বাসও নেই। এতে লোকজনের কষ্টের সীমা নেই। ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ টাকা বাংলাদেশের মানুষের পকেট থেকে যাবে এবং এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাটের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কোনো টাকা দেশে থাকছে না, সব বিদেশে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লুটেরারা পাঁচ লাখ ১০ লাখ ২০ লাখ টাকা চুরি করছে না। তারা চুরি করছে শত শত কোটি টাকা, হাজার হাজার কোটি টাকা, লক্ষ কোটি টাকা। এত টাকা তো বাংলাদেশে রাখা সম্ভব না। এ টাকা তো বিদেশে পাচার করতেই হবে। এত বড় অঙ্কের টাকা বাংলাদেশে রাখা কোনোদিনও সম্ভব না। এটা বাইরে যেতেই হবে এবং বিশ্বের সব জায়গায় তাদের টাকা রাখা আছে। এগুলো সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের টাকা। এমনকি সাধারণ আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করছে, সেক্ষেত্রে বড় নেতারা তো আছেই। সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, বাংলাদেশে জনগণের সরকার নেই। সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, জবাবদিহিতা নেই। তারা বারবার জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। ২০০৮, ২০১৪ এবং সবশেষ ২০১৮ সালে তারা ভোট চুরি করেছে। চুরি করতে করতে তারা একদম পাকা চোরে পরিণত হয়েছে। তবে একটা কথা বলে দেই, কথায় আছে না- চোরের দশ দিন গৃহস্থের একদিন, সামনে আর চুরি করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি এ দুর্নীতিবাজ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না এবং আলোচনায় যাবে না। শুধুমাত্র নিরপেক্ষ সরকারের আলোচনা হতে পারে। সেটা কীভাবে হবে তা আওয়ামী লীগের সাথে নয়, আলোচনা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে। সবাইকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা তৈরি করা হবে।
খসরু বলেন, সেই নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যত সংস্থা আছে, তার কর্মকাণ্ড কীভাবে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে এর বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ সদস্য বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার ও জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের জীবনযাত্রার মান কেড়ে নিয়েছে। বাকস্বাধীনতা নেই। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে আন্দোলনে আসতে হবে। আন্দোলনের দায়িত্ব বিএনপির একার না। কত সাংবাদিক দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। বিশ্বের যেখানে যাবেন সেখানেই আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনদের পলাতক অবস্থান পাবেন। তারা বাধ্য হয়েছে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে। আর কত পালাবেন, এখন ঘুরে দাঁড়ান। খসরু আরও বলেন, ডিজেল-কেলোসিনের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের এ মাশুল দিতে হবে। এতে কোনো দায় নেই সরকারের। এর থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে দেশকে মুক্ত করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারলে, তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে পারলে দেশে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার আসবে। এর বাইরে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। এসময় তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির ডাকের অপেক্ষা করবেন না, বিএনপি অবশ্যই আন্দোলনের ডাক দেবে, আন্দোলনে যাবে। জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব আপনাদের মুক্ত করার। সে দায়িত্ব বিএনপি অবশ্যই পালন করব। কিন্তু সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহমেদ আজম খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।