শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ এমনকি মাদ্রাসা ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যা করছেন। করোনাকালীন আত্মহত্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে মানসিকভাবে ভেঙেপড়া, মাদকতা, আর্থিক সংকট, হতাশা, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, চাকরি নিয়ে হতাশাসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। গত বছরের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, করোনাকালীন ১৫ মাসে ১৫১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, যে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন তাদের মধ্যে ৪২ জন শিক্ষার্থীই সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের, ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী, ২৯ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। যারা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন, তাদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আছেন ছয়জন শিক্ষার্থী। একই সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আঁচলের জরিপ বলছে, সার্বিকভাবে আত্মহননের প্রবণতা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। যারা আত্মহত্যা করেছেন, তাদের প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বলে সংগঠনটি মনে করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হোসাইন। বরিশালের উজিরপুরে বাসিন্দা ইমাম গত বছরের ১৭ই আগস্ট নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। প্রেম-সংক্রান্ত জটিলতায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহননের আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। গত ২৭শে সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহদী অপু আত্মহত্যা করেন। রাজধানীর চানখাঁরপুলের একটি মেস থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তীব্র বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শুভজ্যোতি মণ্ডল। গত বছরের ১৪ই অক্টোবর বিকালে আদাবর মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর রোডের ১৪১ নম্বর বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী। শুভজ্যোতির পরিবার বলেছে, বিষণ্নতার জন্য তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। রাজধানীর ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘এ’ লেভেল’স এর শিক্ষার্থী চৌধুরী সামছুজ্জমান বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এক্ষেত্রে দায়ী। কারণ, তারা ঠিকভাবে আমাদেরকে কাউন্সিলিং করছে না। এছাড়া সামাজিকভাবে বিভিন্ন চাপতো রয়েছেই। আমরা যারা পড়ালেখা করছি আমাদের একটা বড় ঝুঁকি থেকেই যায়। সব সময় চিন্তায় থাকি এত পড়ালেখা করে চাকরি কি পাবো? এজন্য এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দেশের বাইরে চলে যায়। যারা যায় তারা আর ফিরতে চায় না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. রাজিবুর রহমান বলেন, এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদেরকে শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক বেশি দায়িত্বশীল এবং যত্নবান হতে হবে। করোনাকালে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও মানসিক বিষণ্ন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে মাসে এক থেকে দু’বার কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের আনন্দের মধ্যে শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষকদের আচরণ হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদেরকে তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে- সব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।