ফেসবুক নামটা কি খারাপ ছিল? কেন পাল্টাতে হলো!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, ফেসবুকের নতুন নাম ঠিক করা হয়েছে মেটা। গত বৃহস্পতিবার রাতের দিকে ফেসবুকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে ওই সংস্থার তৈরি অ্যাপ- ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার এবং হোয়্যাটসঅ্যাপের নাম বদলে যাচ্ছে না।
মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের জন্য ভার্চুয়াল-বাস্তবতার দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে ফেসবুককে নতুন নাম মেটা হিসেবে পুনরায় ব্র্যান্ডিং করা হবে। আগামীর পৃথিবী মেটাভার্স যুগে পদার্পণ করতে যাচ্ছে বলে আগেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
তবে অনেকেই মনে করছেন, সম্প্রতি ফেসবুক যে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তা থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মার্কেটিং কনসালট্যান্ট লরা রাইস বলেছেন, ফেসবুক হলো বিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং তাদের বিরুদ্ধে এমন কিছু তৈরি করার অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা মানুষ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরো বলেন, তিনি ফেসবুকের মেটা নামের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে পেট্রোলিয়াম কম্পানি বিপির উদাহরণ দেন। সমালোচনা থেকে বাঁচতে বিপি নাম বদলে ফেলেছিল।
শুক্রবার একাধিক টুইট বার্তায় ফেসবুকের তরফ থেকে বলা হয়, ফেসুবকের নতুন নাম মেটা ঘোষণা করা হচ্ছে। মেটাভার্স তৈরি করতে সাহায্য করছে মেটা। মেটাভার্স হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে আমরা থ্রিডি মাধ্যমে খেলব এবং যোগাযোগ স্থাপন কবর। সামাজিক যোগসূত্রের নতুন অধ্যায়ে স্বাগত।
সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ দাবি করেছেন, আপাতত ফেসবুক বলতে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবার (ফেসবুক) দিকে মানুষের নজর যাচ্ছিল।
তার কথায়, এই মুহূর্তে আমাদের যে ব্র্যান্ড, তা শুধু প্রডাক্টের (ফেসবুক) সঙ্গে এতটাই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে আমরা যা যা করছি, তার সম্ভবত প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না।
এমনিতে সম্প্রতি একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছে ফেসবুক। বাজারের দখল, অ্যালগরিদম এবং নীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনায় পড়েছে। তার মধ্যে ‘রিব্র্যান্ডিংয়ের’ পথে হেঁটেছে ফেসবুক।
জাকারবার্গ দাবি করেছেন, মেটাভার্স চালু হয়ে গেলে ভার্চুয়াল পরিবেশে শুধু স্ক্রিনে দেখার পরিবর্তে ভেতরেও প্রবেশ করার অনুভূতি পাবেন।
শুধু একটি হেডসেট এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি চশমা ব্যবহার করেই স্মার্টফোন অ্যাপসের সাহায্যে দূরের কারো সঙ্গে মুখোমুখি বসে আড্ডা দেওয়া যাবে, খেলা যাবে এবং কাজ করা যাবে। মেটাভার্স ধারণায় বলা হয়েছে, এভাবে কেনাকাটাও করা যাবে।
মেটাভার্স এমন একটি ধারণা, যা প্রযুক্তি কোম্পানি, বিপণনকারী এবং বিশ্লেষকরা পরবর্তী বড় বিষয় হিসেবে মনে করছেন। এই মেটাভার্স প্রযুক্তি জগতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান, যেমন ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ এবং এপিক গেমসের টিম সুইনির মতো ব্যক্তিদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে এবং তাদের পকেটের অর্থ ব্যয় করাচ্ছে।
সাধারণ জনগণের কাছে এটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটির (ভিআর) একটি সংস্করণের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষ মনে করছে, এই মেটাভার্স হলো ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ অবস্থা। শিগগিরই ইন্টারনেট মেটাভার্স যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। সেটারই ইঙ্গিত দিয়ে ফেসবুকের নতুন নাম মেটা করা হচ্ছে।
মেটাভার্স আসলে বর্তমান সময়ের ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মতো নয়। ভিআর বেশির ভাগই গেমিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মেটাভার্স নামক ভার্চুয়াল জগৎটি কার্যত যেকোনো কিছুর জন্যই ব্যবহার করা যেতে পারে; যেমন – কাজ, খেলা, কনসার্ট, সিনেমা দেখা, ভ্রমণ অথবা শুধু আড্ডা দেওয়ার জন্যও উপযুক্ত থাকবে।
মেটাভার্স উন্নয়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে অন্তত ১০ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ফেসবুক। মেটাভার্স ধারণাটি বাস্তবায়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা করছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী।
আগামী পাঁচ বছরে যে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, তাতে ‘অত্যন্ত বিশেষায়িত প্রকৌশলী’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। জানা গেছে, ফেসবুক মেটাভার্স জগৎ নির্মাণকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তবে ফেসবুক বলছে যে, মেটাভার্স একক কোনো কম্পানি রাতারাতি তৈরি করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে ফেসবুক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সম্প্রতি এই খাতে ৫০ মিলিয়ন ডলার লগ্নি করেছে ফেসবুক। তবে সত্যিকারের মেটাভার্স ধারণা বাস্তবায়নে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে।
সূত্র : ওয়ান ইন্ডিয়া।