যশোরে তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি : হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়ির চুরি রহস্য উদঘাটন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের ডিবি পুলিশ শার্শা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের ইসরাফিল হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৩ বছর আগে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে চুরির রহস্য উদঘাটন করেছে। রিমান্ডে আসামিদের কাছে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসাবাদকালে ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে চুরির ঘটনা বেরিয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, গত বুধবার শার্শা উপজেলার নাভারন ও বাগআঁচড়ার দুটি জুয়েলারির দোকানে অভিযান চালিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে চুরি যাওয়া সোনার অলঙ্কার উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পাতিবার রিমান্ডে থাকা ৩ আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গৌতম মল্লিক ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাইফুদ্দীন হোসাইন তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
ইসরাফিল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, গত ২৭ আগস্ট শার্শা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গার বিড়ি শ্রমিক ইসরাফিল নিখোঁজ হন। পরদিন ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হলে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ। পরে নানা তথ্যের ভিত্তিতে সন্দিগ্ধ কয়েকজনকে আটকের পর জানা যায়, ইসরাফিল খুন হয়েছেন। পরকীয়া ও জায়গাজমি নিয়ে বিরোধসহ কয়েকটি কারণে তাকে খুন করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর আটক সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিতে কাশিয়াডাঙ্গার একটি কবরস্থান থেকে মাটিচাপা দিয়ে রাখা ইসরাফিলের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে এর সংক্রান্তে শার্শা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এরপর ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শার্শা উপজেলার রাড়ীপুকুর এলাকার মৃত শাহাজাহান মীরের ছেলে মেহেদী হাসানকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গত ১৫ অক্টোবর আটক করা হয়। আটকের তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইসরাফিল হত্যার নেপথ্যে পরকীয়া, জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ ছাড়াও একজন ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে চুরির কাহিনী রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেহেদী হাসান ডিবি পুলিশকে জানান, ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই রাতে কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুসের বাড়ির তালা ভেঙে সোনার অলঙ্কার ও নগদ টাকা চুরি করে ইসরাফিল হত্যা মামলার আসামি নুর আলমের ভাইপো জনি ও মফিজ। নুর আলম ও আব্দুল আজিজ নামে হত্যা মামলার আরেক আসামি তাদের কাছ থেকে চুরির সোনার অলঙ্কার নিয়ে নেন। কিন্তু চুরির এই ঘটনা জেনে যায় ইসরাফিল। তিনি বিষয়টি প্রকাশ করে দেয়ার জন্য তাদেরকে হুমকি দিয়েছিলেন। যে কারণে নুর আলম ও আব্দুল আজিজসহ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সব পক্ষ একজোট হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে তাকে হত্যা করা হয়।
এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, চুরির বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুসের বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে এর সত্যতা পান। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস এ ঘটনায় গত ১৬ অক্টোবর শার্শা থানায় একটি মামলা করেন। তিনি বলেন, হত্যা মামলায় বিভিন্ন সময় আটক ৩ জন আসামি যথাক্রমে জনি, নুর আলম ও মেহেদী হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২১ অক্টোবর আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। গত ২৬ অক্টোবর শুনানি শেষে আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরপর গত বুধবার তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে চুরি এবং সোনার অলঙ্কার বিক্রির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এর প্রেক্ষিতে আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন বিকেলে নাভারন রেলবাজারস্থ সানজিদা জুয়েলার্স ও বাগআঁচড়ার অনিতা জুয়েলার্সে অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া অলঙ্কারের মধ্যে ১ ভরি, ১১ আনা ৪ রতি সোনা উদ্ধার করা হয়। আসামিরা এই দুটি দোকানে সোনার অলঙ্কার বিক্রি করেছিলো। ডিবি পুলিশ জানায়, রিমান্ড শেষ হওয়ায় উল্লিখিত ৩ আসামিকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ সময় আসামিদের মধ্যে নুর আলম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম মল্লিক এবং অপর দুজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুদ্দীন হোসাইনের আদালতে হত্যা ও চুরির বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।