ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে ১টি পা, তবুও থেমে নেই মেধাবী ছাত্র মিন্টুর পথচলা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ নিজের ইচ্ছা শক্তি থাকলে অনেক কিছুই যে সাধন করা যায় তারই এক জলন্ত উদাহরন চৌগাছার মেধাবী ছাত্র জহিরুল ইসলাম মিন্টু। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শরীর থেকে একটি পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে সুস্থ্য হয়ে ৩ চাকার মটরসাইকেলে করে এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামে যেয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে করছেন রোজগার। শিক্ষাজীবন শেষ করতে চলছে চেষ্টা, ছুটির দিনে গ্রাম্য চিকিৎসকের কোর্স করতে আসনে চৌগাছা শহরে। পঙ্গু মিন্টুর কষ্টের এই পথচলা অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কিসমতখাঁনপুর গ্রামের কৃষক জহর আলী ৩ ছেলের মধ্যে জহিরুল ইসলাম মিন্টু সবার ছোট। অত্যান্ত মেধাবী মিন্টু প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তর সাফল্যের সাথে পার করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে ভর্তি হন যশোর এমএম বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাষ্ট্রবিঞ্জানে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র মিন্টু, সময় ছিল ২০১৫ সাল। হঠাৎ একদিন ডান পায়ে ব্যাথা, ছুটে যান চিকিৎসকের কাছে। অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পর ধরা পড়ে বোন ক্যান্সার। দেশে দীর্ঘ চিকিৎসা নিয়ে তেমন কোন উন্নতি না হওয়ায় ছুটে যান পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের ভেলরে। দীর্ঘ ৩ মাস নিবিড় চিকিৎসা শেষে ফিরে আসে নিজ বাড়িতে। কিছু দিন যেতে না যেতেই পুনরায় সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আবারও সু চিকিৎসার জন্য যেতে হয় ভেলরে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে চিকিৎসকরা তার শরীর থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত ডান পা কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলে দেয়। দীর্ঘদিন ভারতে থেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে এক বুক হতাশা নিয়ে ফেরেন বাড়িতে। দীর্ঘ ৫ বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে সন্তানের পিছনে কৃষক জহর আলীর। তারপরও পিতার মনে কষ্ট নেই কারন ছেলে পঙ্গু হলেও যে সব সময়ে সামনেই ঘুরাফেরা করছে এতেই খুশি অসহায় গরীব এই পিতা।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন এক পা হারা জহিরুল ইসলাম মিন্টু মটরসাইকেল চালিয়ে ছুটছেন আপন ঠিকানায়। পথে তার গতিরোধ করে কথা হয় এই মেধাবী ছাত্রের সাথে। মিন্টু জানান, এক পা নেই কষ্ট হয়, তবে সবার মাঝে আমি যে বেঁচে আছি এটিই সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার শুকরিয়া। আমার চিকিৎসা করাতে পিতা এখনও ১২ লাখ টাকার উপরে দেনা। অভাবের সংসারে কৃষক পিতাকে কিছুটা হলেও সহযোগীতার জন্য একটি ডিসকভারী ১২৫ সিসি মটরসাইকেল কিনেছি। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচে পিছনের অংশে দু’টি চাকা সেট করে নিয়েছি এবং বাম পাশে ব্রেকসহ সব কিছুই সেটি করেছি। মটরসাইকেল ৩ চাকা হওয়ায় চালাতে তেমন কোন সমস্যা হয়না। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজ গ্রামের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী আদমপুর, চাঁদপাড়া, গুয়াতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে যেয়ে প্রাইভেট পড়াই। এখানে যা রোজগার হয় সমুদয় টাকা পিতার হাতে তুলে দিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাই। প্রাইভেট পড়ানোর পাশাপাশি শুক্রবারে চৌগাছায় গ্রাম্য চিকিৎসকের একটি কোর্স করতে আসি। বলাচলে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপয় আমি এখন ভাল আছি। তিনি আরও বলেন, অনার্স ৩য় বর্ষে পড়া অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হই, যে কারনে আর কোন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এখন সুস্থ্য হয়ে উঠেছি, তাই বাকি পরীক্ষা গুলো যাতে সম্পন্ন করতে পারি তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছি, কিন্তু এখন কোন ফল পাইনি। শিক্ষা জীবন শেষ করে একটি ভাল চাকরীর সন্ধান করতাম, কিন্তু হবে কিনা জানিনা। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম এখন পঙ্গু, কিন্তু তার ইচ্ছা শক্তিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। এক পা নেই তারপরও বিকল্প ব্যবস্থায় সে দিন রাত ছুটে চলেছেন আর পাঁজন ভাল মানুষেরই মত। মিন্টু সমাজের অন্য বেকার যুবকদের কাছে এক দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন অনেকে।