লোকসমাজ ডেস্ক॥ সমাজে দুর্নীতি প্রতিরোধে পাঠ্যক্রমে সততা, নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে পরিবার ও স্কুল পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের সম্মানিত করার পরিবর্তে ঘৃণা করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা আহ্বানকে রুটিন কাজ ও দায়িত্বের অংশমাত্র উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, অফিস চলাকালীন এসব কাজের জন্য সিটিং অ্যালাউন্স মোটেই সমীচীন নয়। তিনি বলেন, দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিধ মিটিংয়ে সিটিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ বাড়ছে। অফিস চলাকালীন এসব মিটিংয়ের সিটিং অ্যালাউন্সসহ অন্যান্য খরচও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এসব রুটিন কাজের জন্য সিটিং অ্যালাউন্স করা ঠিক নয়।
রোববার (১৭ অক্টোবর) ইউজিসি আয়োজিত “দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি” নিয়ে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান। সেমিনারে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ নৈতিকতা বহির্ভূত এবং বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা অবৈধ হারে সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ করছে, যা মোটেও কাম্য নয়। ইউজিসি সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতির অভিযোগে করা কমিশনের তদন্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। তিনি জানান, তার অধীনে গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ১৩টি তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থা চললে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি না কমে বরং বাড়তে থাকবে। অপর কমিশন সদস্য প্রফেসর আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানে অটোমেশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। মুখ্য আলোচক হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর হচ্ছে দুর্নীতি। সংঘবদ্ধ দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট ও তদন্ত সেলের তৎপরতা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি। সেমিনারে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে শক্তিশালী করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, অ্যাডুকেশন মোটিভেশন, ট্যাক্স রিটার্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। সেমিনারে ইউজিসি পরিচালকসহ ২৭ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অংশ নেন।