এলপিজির দর নিয়ে ভোগান্তি কি শেষ হবে না?

0

সঞ্চিতা সীতু॥ গত ৩১ আগস্ট ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দর ১০৩৩ টাকা এবং সাড়ে ১২ কেজির দর ১০৭৬ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। কিন্তু ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে খুচরা বিক্রেতারাই কিনছেন কমিশনের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ১২০-১৪০ টাকা বেশি দিয়ে। যার কারণে গ্রাহককে প্রতি সিলিন্ডারে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২৭০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারের একজন এলপিজি ব্যবসায়ী জানান, তিনি প্রতি সিলিন্ডার এলপিজি কোম্পানি ভেদে ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। বিইআরসির দেওয়া দরের চেয়ে কেন ২৭০ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছেন জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিইআরসি গ্রাহকের জন্য ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ঠিক করেছে ১০৩৩ টাকা। আর আমি ডিলারদের কাছ থেকে পাইকারি কিনছি ১১৮০ টাকায়। বিইআরসি গ্রাহকের জন্য যে দর ঠিক করে দিল, আমিই কিনছি তারচেয়ে ১৪৭ টাকা বেশি দিয়ে। এরপর দোকান ভাড়া, পরিবহন, কর্মচারীর বেতন ও মুনাফা রয়েছে। সিলিন্ডার প্রতি লাভ করছি ৭০ টাকা। এ হিসাবে খুচরা বিক্রেতাদের লাভ হচ্ছে মাত্র ৬ শতাংশ। ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘কোম্পানিগুলো দাম না কমালে আমাদের ওপর চাপ দিয়ে লাভ নেই।’
গত ৩১ আগস্ট সৌদি এরামকো প্রোপ্রেন ৬৬০ এবং বিউটেন ৬৫৫ মার্কিন ডলার হিসাব করে কমিশন এলপিজির দর নির্ধারণ করে। এতে এলপিজির গড় দাম পড়ে ৬৫৬ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রোপেন বিউটেনকে ৩৫:৬৫ অনুপাতে মিশ্রিত করে এলপিজি তৈরি করা হয়। এর মধ্যে বিইআরসি আজ ফের এলপিজির দর নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। যদিও গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত যতবারই সরকারিভাবে দর ঘোষণা হয়েছে তার একটিও মানেনি ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে কমিশনের এক সদস্য বলেন, এখন গ্রাহকদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তারা অন্তত বলে আসুক কমিশনের দরের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন কেন। এতে কাজ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্তত প্রতিবাদটুকু হোক।’ এমন প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন এন’স কিচেনের কর্ণধার ফাতেমা আবেদীন। তিনি বলেন, ‘সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে দেখি দাম ১৩০০ টাকা। দোকানির কাছে জানতে চাইলাম, এত কেন? এটার দাম তো ১১০০ টাকার কাছাকাছি হওয়ার কথা। দোকানি বলল, আপনি ১১০০ টাকায় কোথাও পেলে কিনে নেন। আমি না নিলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজনকে সিলিন্ডার দেবেন বলে জানান। ফলে বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার কিনি।’ বিভাগীয় শহরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামে এ মাসে পেট্রোম্যাক্স কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়, বসুন্ধরার সিলিন্ডার ১২৫০ টাকা, এনার্জিপ্যাকের ১২০০ টাকা, বেক্সিমকোর ১২৫০ এবং টোটাল গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়। বরিশালের বাংলা বাজার, নতুন বাজার, সাগরদী, চৌমাথা ও বড় বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মুদি দোকানে ১২ কেজির এলপিজি গ্যাসের দাম- বসুন্ধরার ১২০০ টাকা, ক্লিনহিট ১১৭০ টাকা, টোটাল গ্যাস ১২২০ টাকা, যমুনা ১২০০ টাকা এবং ফ্রেশের সিলিন্ডার ১১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খুলনা এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতির তোবারক হোসেন তপু জানান, খুলনার খুচরা ব্যবসায়ীরা ১২২০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকায় সব ধরনের গ্যাসের ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। তারা পাইকারি কিনছেন ১১৫০ থেকে ১১৮৬ টাকায়। সরকারি গ্যাস খুলনায় ঠিকমতো না আসায় বেসরকারি গ্যাসের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ময়মনসিংহের খুচরা বাজারেও ১২ কেজি এলপিজির দাম কোম্পানি ভেদে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরার চেয়ে পাইকারি দর ১০০ টাকা কম।