নির্বাচনে প্রার্থীর আকাল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নির্বাচনে ‘ভোটারের খরা’ কথাটি বহুল প্রচলিত। ‘প্রার্থীর আকাল’ কথাটির সঙ্গে দেশের মানুষ তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনে এখন প্রার্থীর আকাল দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীনদের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী কাউকে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। দলগুলো কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিতে চাইলেও অনাগ্রহ সংশ্লিষ্টদের। এমন পরিস্থিতিতে শুধু ভোটারদের মধ্যেই নয়, প্রার্থী হতে আগ্রহ জাগাতেও আস্থা ফেরানোর ওপর জোর দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ক্ষমতাসীনদের বাইরের একাধিক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইত্তেফাকের সঙ্গে পৃথক আলাপকালে জানান, অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে একাধিকজন আগ্রহী থাকতেন। মনোনয়ন পেতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা থাকতো। এমনও হতো- আগ্রহী তিন/চারজনের প্রত্যেকেরই যোগ্যতার মাপকাঠি উনিশ-বিশ। সেখান থেকে একজনকে বাছাই করতে দলকে কোনো-কোনো ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু সেই ছবি এখন পাল্টে গেছে। দল মনোনয়ন দিতে চাইলেও মনোনয়ন নেওয়ার মতো আগ্রহী ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
এমন দৃশ্যপট কেন? জবাবে ক্ষমতাসীনদের বাইরের বিভিন্ন দলের নেতারা জানান, কাউকে মনোনয়ন দিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা নেতা-কর্মীরা বলছেন- ‘ভোটে দাঁড়িয়ে কী হবে!’ তাদের এমন বক্তব্যের জবাবে জোরালো কোনো যুক্তিও দেখাতে পারছে না শীর্ষ নেতৃত্ব কিংবা দলের মনোনয়ন বোর্ড। ক্ষমতা কিংবা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সংকীর্ণ মনে করছে এই দলগুলো। প্রার্থী হতে কিংবা মনোনয়ন নিতে আগ্রহী খুঁজে পেতে অন্যান্য দলগুলো সংকটে পড়লেও ক্ষমতাসীন শিবিরের দৃশ্য বিপরীত। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। কোথাও কোথাও একজনের বিপরীতে আগ্রহীর সংখ্যা ৭০, ৮০ এমনকি শত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে মনোনয়ন প্রাপ্তি মোটামুটি এক ধরনের যুদ্ধে জয়ী হওয়ার মতো। মনোনয়ন বিজয়ী ও তার কর্মী-সমর্থকদের উত্সব পরিণত হয় যেন চূড়ান্ত বিজয়ের উদ্যাপনে। জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রেই শুধু নয়; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ও ব্যবসায়ী সংগঠনসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নির্বাচনের চিত্রও অনেকটা অভিন্ন। সেখানেও ক্ষমতা কিংবা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ততা ছাড়া অন্য কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে তেমন আগ্রহী হচ্ছেন না। এসব সংগঠনেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর খরার খবর গণমাধ্যমে অহরহ দেখা যায়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের বাইরের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন স্তরের নেতারাও যেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়- সেক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তাদেরকে আগ্রহী করে তুলতে কমিশনকেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রার্থীদের আস্থা ফেরানোর দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে কমিশনকে। কি কি কারণে তারা প্রার্থী হতে অনাগ্রহী সেগুলো চিহ্নিত, কমিশনেরও তা অজানা নয়। ‘ভোটে দাঁড়িয়ে কী হবে!’- একথার মর্মবাণী উপলব্ধি করে ‘ভোটে দাঁড়ালে সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন, সত্যসত্যই ভোটাররাই হবেন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচক’ এমন বিশ্বাস স্থাপন করাটাই এখন জরুরি।