প্রস্তুতি নেয়ার সময় এখন

0

প্রথম দফা করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবার পরই করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছিল। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৫ শতাংশের ওপরে চলে গিয়েছিল। কোনো কোনো জেলায় এই হার ছিল প্রায় শতভাগ। মৃত্যুর বর্তমান সংখ্যাটা এই সময়েরই ফসল সেই তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। টানা চার সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার কমছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৩.২৪ শতাংশ। ১৩টি জেলায় শনাক্তের হার ছিল শূন্য। কোনো কোনো জেলায় শনাক্তের হার এখনো কিছুটা বেশি, তবে কোথাও তা ১০ শতাংশের ওপরে নয়। মৃত্যু সংখ্যাও সর্বনিম্ন করোনা মৃত্যু ও সংক্রমণের এই নিম্নগতি স্বস্তিদায়ক হলেও নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো নয়। কারণ গত ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার তিনের নিচে নামলেও পরে তা ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। আবার টিকা দিলেই যে সংক্রমণ বাড়বে না তা-ও নয়। অনেক দেশে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরও সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে এবং মৃত্যুও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে।
একথা সত্য যে বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট বা ধরন তৈরি হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কোনো কোনো ধরনের টিকার কার্যকারিতা কম হতে পারে। তার পরও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মধ্যখানে টিকার কিছুটা সংকট হলেও এখন টিকার সরবরাহ যথেষ্ট ভালো। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের মধ্যেই ২০ কোটি ডোজ টিকা এসে যাবে। তার অর্থ দুই ডোজ করে ১০ কোটি মানুষকে এই টিকা দেওয়া যাবে। টিকা প্রদানের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় ২০ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই তা ৭০-৮০ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বহাল রাখতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নিয়মটি বহাল রাখতে হবে। স্কুল-কলেজ, কলকারখানা, গণপরিবহনসহ জনসমাগমের সব স্থানে যেন মাস্ক পরা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এখন স্কুল-কলেজ, কলকারখানা, অফিস, গণপরিবহন, হাট-বাজার, পর্যটন বা বিনোদনকেন্দ্র চালু থাকায় মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় কোনো কারণে সংক্রমণ ফিরে এলে তা ফিরে আসবে অনেক দ্রুতগতিতে, এমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এ সময় আমাদের অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মতো নিয়ম-কানুনগুলো কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে।
টিকা সংগ্রহ এবং টিকা প্রদানের ওপর আরো জোর দিতে হবে। দেশে টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি আরো দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। কারণ যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদেরও আবার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, টিকার এমন চাহিদা ও সংকট ভবিষ্যতেও থাকবে। ক্রমান্বয়ে শিশু-কিশোরদেরও টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এরই মধ্যে কিছু দেশে এই কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারি মোকাবেলায় ব্যক্তিগত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। নিজেকে রক্ষার সম্ভাব্য সব উপায় নিজেকেই অনুসরণ করতে হবে। একই সাথে স্বজন ও প্রতিবেশিদের রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে হবে।