যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক উন্নয়নে ক্ষতিগ্রস্ত গাছে বাড়ছে ঝুঁকি

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে থাকা শতবর্ষী গাছগুলো। রাস্তা চওড়া করার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব গাছ। মাটি কেটে সাড়ে তিন ফুট গর্ত করে রাস্তার নির্মাণের সময় গাছের শিকড় কাটা পড়ে। এতে একটু শক্তিশালী ঝড় হলেই উপড়ে পড়ছে গাছগুলো। এতে মহাসড়কে চলাচলকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, রিস্ক থাকলেও আদালতে মামলা চলার কারণে গাছগুলো অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে সড়কের ঝিকরগাছা বাজার, নবীনগর, নাভারণ ও শার্শার সড়কের পাশে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। একই দাবিতে বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস ইতোপূর্বে সংবাদ ব্রিফিংও করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঐতিহাসিক ‘যশোর রোডের’ (বেনাপোল-যশোর মহাসড়ক) ধারের শতবর্ষী সহস্রাধিক গাছ কেটে সড়ক সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ সিদ্ধান্তের পর গাছ রক্ষায় দেশের সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা সোচ্চার ওয়ে ওঠেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। শুরু হয় সড়কের দুই পাশের গাছ রেখে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। ফলে, মহাসড়ক সংস্কারে ঝুঁকিতে পড়ে গাছগুলো। মহাসড়কের ঝিকরগাছা উপজেলার নবীনগর, ধোপাখোলা, মঠবাড়ী, নাভারণ ও শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাটা পড়ে গাছের মোটা মোটা শিকড়। পাশাপাশি গাছের গোড়াও নড়বড়ে হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বড় গাছগুলো ক্ষতির মুখে রয়েছে। এছাড়া সড়কের দুই ধারের বিভিন্ন জায়গায় গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। এসব গাছ ভেঙে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। আশপাশের বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন অনেকগুলো গাছের ডাল শুকিয়ে গেছে। যেকোনও সময় ডাল পড়ে পথচারী ও যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। এদিকে জুলাই মাসের শেষ দিকে চার দিনের ঝড়বৃষ্টিতে দুটি গাছ উপড়ে পড়ে। বৃষ্টির আগে আরও দুটি বড় গাছ পড়ে যায়। বেশকিছু গাছ ঝুঁকে পড়েছে রাস্তার ওপর। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ ঘটনার পর মহাসড়কের পাশে বসবাসকারী মানুষদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গাছের নিচে চাপা পড়ে জানমালের ক্ষতি হতে পারে বলে সাধারণ মানুষ শঙ্কা করেছেন।
শার্শার ইজিবাইক চালক মুনছুর আলী বলেন,বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের পাশে আমার বসতবাড়ি। বাড়ির সামনে সরকারি বড় শিশুগাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সড়ক সংস্কারের কারণে গাছের শিকড় কাটা পড়েছে। এতে গাছটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। স্থানীয় মমতাজ বেগম বলেন, বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলে ওই গাছ আমার বাড়ির ওপরে পড়বে। যে কারণে পরিবার নিয়ে অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মনজু বলেন, বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের পাশের বাসিন্দারা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের দাবিতে আবেদন করেছেন। জানমালের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণ করা দরকার। কিন্তু গাছ না কাটার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, যশোরের জমিদার কালী পোদ্দার তার মাকে সোজা পথ দিয়ে গঙ্গাস্নানে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ৫৮ হাজার কড়ি ব্যয়ে ১৮৪২ সালে যশোর শহরের বকচর থেকে ভারতের নদিয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করেন। আর ৮০ কিলোমিটারের এই রাস্তার ছায়ার জন্য দুই ধারে কালী পোদ্দার বিদেশ থেকে অতিবর্ধনশীল শিশু গাছের চারা এনে রোপণ করেন। সেই গাছগুলো বেনাপোল-যশোর সড়কে এখনও ছায়া দেওয়ার পাশাপাশি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই মহাসড়কটিই অ্যালেন গিন্সবার্গের সেই ঐতিহাসিক ‘যশোর রোড’।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের নির্মাণ কাজের সময় তিন ফুট গর্ত করে রাস্তার পাশের গাছগুলোর অর্ধেকেরও বেশি শিকড় কাটা পড়ে। বর্তমানে গাছগুলো নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী বর্ষণ এবং ঝড় হলে গাছগুলো ভেঙে সড়কের ওপর ও বাসাবাড়িতে পড়ে জানমালের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য শতায়ু গাছগুলো অপসারণ করে নতুন করে উচ্চ বর্ধনশীল গাছ লাগানো উচিত বলে মত দেন তিনি। ঝিকরগাছার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আব্দুস সালাম বলেন, স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড চত্বরের গাছগুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া নাভারণ পর্যন্ত প্রায় ত্রিশটি গাছের একই অবস্থা। যশোর জেলা পরিষদের সার্ভেয়োর এম এ মঞ্জু বলেন, যশোর- বেনাপোল সড়কে ৬৯৭টি শতবর্ষী গাছ রয়েছে। এসব গাছের ৬০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। আম্পানসহ ছোটবড় ঝড়ে এ পর্যন্ত ১৩টি গাছ উপড়ে পড়েছে। জেলা পরিষদের সদস্য সাহানা আক্তার বলেন, এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে ব্রিজ পর্যন্ত চারটি গাছ অপসরাণের কাজ চলছে। অন্যগুলোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।
জানতে চাইলে যশোর সড়ক ও জনপথ-সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, গাছের মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে আমাদের একটু ঝামেলা রয়েছে। আমরাই গাছের মালিক; কিন্তু জেলা পরিষদ সেটি নিজেদের দাবি করে। এই মহাসড়কে শতাধিক বৃক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিস্ক কন্ডিশনে রয়েছে বিধায় জেলা পরিষদ কয়েকটি গাছ অপসারণে কাজ করছে।