মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমে জবাবদিহিতার ঘাটতি উদ্বেগজনক : টিআইবি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনী নানা ঘাটতিতে এ খাতে সুশাসনের ব্যাপক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণে ২০ দফা সুপারিশ প্রদান করেছে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সাবেক ম্যানেজার তাসলিমা আক্তার হেনা এবং গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেন একই বিভাগের সাবেক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো: জুয়েল মিয়া এবং বর্তমান সিনিয়র ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুণগত এই গবেষণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সীমিত ক্ষেত্রে পরিমাণগত তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ৩২৫ জন মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মাউশির বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয়, ১৮টি উপজেলার ৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সুশাসনের নানা নির্দেশকের আলোকে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের পর ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা আনতে জাতীয় শিক্ষানীতিতে (২০১০) বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করা হলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর খসড়া শিক্ষা আইনটি নিয়ে কাজ করা হলেও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় তা এখনো কার্যকর হয়নি। নতুন শিক্ষা কাঠামোয় শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার পুনর্বিন্যাস করার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা বা রূপরেখা তৈরি হয়নি। শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগে ঘাটতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে পদ্ধতি নিরূপণ ও বাস্তবায়নে এখনো শিক্ষানীতি অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অন্যদিকে, মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনুপাত পর্যায়ক্রমে ২০১৮ সালের মধ্যে ১:৩০-এ উন্নীত করার কথা বলা হলেও, এখনো তা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরে জাতীয় বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য টাকার অঙ্কে মোট বরাদ্দ বাড়লেও শতকরা হিসাবে তা গড়ে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বেড়েছে। ইউনেস্কোর পরামর্শ অনুযায়ী, শিক্ষা খাতে দেশের মোট জিডিপির ছয় শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার সুপারিশ থাকলেও গত দশ বছরে বাংলাদেশে সে হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে জিডিপির প্রায় তিন থেকে ছয় শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দের বিপরীতে শিক্ষাখাতে বাংলাদেশের বরাদ্দ এখনো অনেক কম (২-৩%)। প্রতিবেদনে বলা হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের সরকারি আর্থিক সুবিধার অপর্যাপ্ততা রয়েছে। পদমর্যাদা ও স্কেল উপেক্ষা করে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, অবসর ভাতা তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের এককালীন অবসর ভাতা পেতেও তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে; এমনকি তাদেরকে অবসর ভাতা পাওয়ার সুনির্দিষ্ট তারিখও জানানো হয় না। অন্যদিকে, মাউশি অধিদফতরের আওতাধীন এবং এর সহযোগী সংস্থার অনুমোদিত জনবলের বিপরীতে বিভিন্ন পদে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদিত পদের প্রায় ১২%, উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রায় ৬৪%, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রায় ৩৮% এবং বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় শূন্যপদ রয়েছে প্রায় ৫৮%। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিদফতরের আওতাধীন শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমন্বিত জনবল কাঠামোর ঘাটতির কারণে সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শনের অভাব বিদ্যমান। শিক্ষকদের পদোন্নতিতে দীর্ঘসূত্রতা যেমন রয়েছে তেমনি তাদের আইসিটি, বিষয়ভিত্তিক সৃজনশীল ও ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরির বিষয়ে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতিও রয়েছে। অধিকাংশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস পুরনো ও জরাজীর্ণ ভবনে থাকায় কর্মরতদের স্থান সংকট এবং শিক্ষা উপকরণ ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণের জায়গার অভাব রয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ বিদ্যমান। শিক্ষক এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ ও বিড়ম্বনা, শিক্ষক ও কর্মচারীর এমপিও প্রক্রিয়ার সফটওয়্যার সহজবোধ্য ও কার্যকর না হওয়া এবং সরকারি কলেজের শিক্ষকদের গোপন মূল্যায়ন ফরম (এসিআর) অনলাইনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকার পাশাপাশি মাউশি অধিদফতরে জমাকৃত এসিআর ‘হারিয়ে যাওয়ার’ মতোও অভিযোগ রয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাজের বার্ষিক মূল্যায়ন এবং বদলির ব্যবস্থা নেই। উপবৃত্তিপ্রাপ্তদের তালিকা যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকার ফলে অনিয়মের মাধ্যমে উপবৃত্তির তালিকার তৈরির নজির থাকলেও এবিষয়ে যেকোনো ধরনের সমস্যা, অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ জানানোর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই। উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা প্রতি মাসে ১৫টি এবং আঞ্চলিক উপ-পরিচালকরা প্রতি মাসে ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিদর্শনের কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা করা হয় না। এমনকি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিন থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আর্থিক দুর্নীতি বা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাটতির পাশাপাশি পরিদর্শন প্রতিবেদন অধিদফতরে না পাঠানোর অভিযোগও আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বা বদলির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে অন্তত চারটি স্থানে ‘হাদিয়া বা সম্মানী’ দিয়ে নথি অগ্রায়ন করাতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএমসি/গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগ, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমোদনের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের পাশাপাশি নিবন্ধন সনদ, কম্পিউটার ও অন্যান্য একাডেমিক সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পদে, বিভিন্ন পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। খোদ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫৭৭ জন শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, কম্পিউটার ও অন্যান্য একাডেমিক সনদ ইত্যাদি জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আইসিটি’র মাধ্যমে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রকল্পমূল্য অপেক্ষা অতিরিক্ত মূল্যে পৃথক প্যাকেজে ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সময় স্বল্পতা ইত্যাদি কারণ না থাকা সত্ত্বেও সরাসরি ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। প্রশিক্ষণ খাতেও বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে দরপত্র ছাড়াই দুই কোটি ২৫ লাখ দুই হাজার টাকা প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, সার্টিফিকেট ও প্রশিক্ষণ সামগ্রী বাবদ ব্যয় করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশিক্ষণ খাতে দরপত্র ছাড়াই অগ্রিম অর্থ উত্তোলন করে প্রকল্প পরিচালকের বছরে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করার ক্ষমতা থাকলেও এক্ষেত্রে ৯৬ কোটি টাকা অগ্রিম তোলার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। আবার প্রশিক্ষণে উপস্থিত না থেকেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্মানী নেওয়ার অভিযোগ আছে। সরেজমিন পরিদর্শনের প্রমাণ ছাড়াই প্রকল্প পরিচালককে ‘প্রোগ্রাম পরিচালক’ দেখিয়ে মাত্র সাড়ে তিন মাসে প্রায় ১৭ লাখ টাকা সম্মানী গ্রহণ করার তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ কোভিড-১৯ মহামারীতে কারিগরি দক্ষতা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ এবং ডিভাইস কেনার আর্থিক সক্ষমতার অভাবে বহু স্থানে অনলাইনে ক্লাসের কার্যক্রম সফল হয়নি। ধনী-গরীব ও শহর-গ্রামের মধ্যে শিক্ষা পাওয়ার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হয়েছে এবং অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ সত্ত্বেও এ খাতে যে পর্যায়ের সক্ষমতা ও অগ্রগতি অর্জন প্রত্যাশিত ছিল তাতে এখনও ঘাটতি বিদ্যমান মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রায় ১১ বছর পার হলেও এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দৃশ্যত প্রাধান্য না পাওয়ায় শিক্ষা আইন পাসের পথে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাজেটের বরাদ্দ অত্যন্ত অপ্রতুল; যার ফলে অবকাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রত্যাশিত প্রস্তুতি বা অর্জন কোনটিই সম্ভব হয়নি। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতির ব্যবস্থাও সীমিত। অন্যান্য খাতের তুলনায় বেতন-ভাতা ও প্রণোদনা এখানে তুলনামূলকভাবে কম। যার ফলে মাধ্যমিক শিক্ষায় উৎকর্ষ অর্জনের সম্ভাবনাও স্বাভাবিকভাবেই কম।’ এই খাতে এখনো সুষ্ঠু জবাবদিহিতা কিংবা পরীবিক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি মন্তব্য করে নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বহুল প্রচলিত হলেও মাধ্যমিক শিক্ষাখাতে এখনো তা প্রচলিত হয়নি; ফলে অনিয়ম দুর্নীতি চলছেই। এমনকি শিক্ষক নিয়োগ ও বদলি, এমপিওভুক্তি, পাঠদান অনুমোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও দুর্নীতির বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক, যা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে উঠছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষাখাতে সুশাসনের এসব ঘাটতি দূর হবে।’ গবেষণার ফলাফলের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আইন ও নীতি সংক্রান্ত, আর্থিক বরাদ্দ সংক্রান্ত, মানবসম্পদ, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো ও লজিস্টিকস সংক্রান্ত, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে ২০ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে টিআইবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; মাঠ পর্যায়ে সরাসরি রাজস্বখাতের আওতাভুক্ত সমন্বিত জনবল কাঠামো তৈরি করা; অনলাইনে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনা, শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহকৃত ল্যাপটপ, প্রজেক্টরসহ অন্যান্য উপকরণ রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান করা; উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খসড়া নিয়োগবিধি দ্রুত চূড়ান্ত করা; বেসরকারি সকল নিয়োগ বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা; শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধিতে পদক্রম বৃদ্ধি করা; ইত্যাদি।