যশোরের পল্লীতে মানব সেবার নজিরবিহীন উদ্যোগ অধ্যাপক এমএ রশীদের

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ ‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য’-উপমহাদেশের অমর কণ্ঠ শিল্পী ভূপেন হাজারিকার এই বিখ্যাত গানটি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন দেশ সেরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এমএ রশীদ। মানব কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি যশোরের পল্লীতে ‘আমাদের বাড়ী’ নামে একটি সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস গড়ে তুলেছেন। যশোর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের নাটুয়াপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন তিনি। গফুর, মরিয়ম, সাত্তার সাকেরা নামের আধ্যাক্ষর নিয়ে জিএমএসএস ফাউন্ডেশন গঠনের মাধ্যমে তিনি নিভৃত পল্লীতে নানা কর্মযজ্ঞে আলোকিত করে যাচ্ছেন। এবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে তিনি আমাদের বাড়ীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ফাউন্ডেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি আমাদের বাড়ীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ফাউন্ডেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অধ্যাপক এমএ রশীদ বর্তমানে ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
হৈবতপুর ইউনিয়নের লাউখালী গ্রামে কৃষক পরিসরে জন্ম নেয়া এই মানুষটি নিজের যোগ্যতাও কর্ম গুণে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। স্কুল জীবন থেকে তিনি স্বপ্ন দেখতেন নিজ এলাকা ও মানুষের জন্যে কিছু একটা করতে হবে। সেই উপলব্ধি থেকে তিনি নাটুয়াপাড়া গ্রামে আশির দশকে প্রয়াত পিতার নামে আব্দুল গফুর মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে একই স্থানে ২০১৫ সালে প্রয়াত মাতার নামে মরিয়ম বিবি মহিলা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পিতা মাতার নামে প্রতিষ্ঠিত দুটি বিদ্যাপীঠের পাশে এক একরের অধিক জমির ওপর ‘আমাদের বাড়ী’ নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যা একটি সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস। সমাজের অনাথ, হতদরিদ্র, অবহেলিত সুবিধা বঞ্চিতদের জন্যে এটা গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে একশ শিশু এবং একশ প্রবীণ বসবাস করতে পারবেন। শিশুরা যেমন প্রবীণদের সান্নিধ্যে পরম আদর স্নেহ নিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে, তেমনি প্রবীণরাও শেষ বয়সে শিশুদের সাথে হেসে খেলে জীবন পার করতে পারবেন। নিবাসটিতে রয়েছে, শিক্ষা, চিকিৎসা কেন্দ্র, হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান, জিমনেশিয়াম, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রয়েছে, মাছ চাষ, কৃষি খামার, হাঁস মুরগি ও গরু পালনের ব্যবস্থা নিবাসের বাসিন্দারা এর সুবিধা ভোগ করবেন। কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া হবে নিজস্ব হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে রয়েছে নির্দিষ্ট শয্যা সংখ্যার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবিকাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মেশিন। রয়েছে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা। পড়ার জন্য রয়েছে একটি গ্রন্থাগার। নিবাসের শিশুদের জন্য রয়েছে শিক্ষার ব্যবস্থা। যাদের যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হবে। পরিচালনার জন্যে রয়েছে নিজস্ব জনবল। তাদের রয়েছে নিজস্ব ডরমেটরি। সরকারের পাশাপাশি জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক এমএ রশীদকে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে আমাদের বাড়ী সাজাতে নাটুয়াপাড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টি নন্দন, ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বেশ কয়েকটি ভবন। ভবনগুলো চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রবেশদ্বারটিও অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে। কেবল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। এরপর থেকে নিবাসটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। সোমবার সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার নিবাসটি পরিদর্শনে আসেন। জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক এম এ রশীদ তাকে নিবাসটি ঘুরে ঘুরে দেখান। পরিদর্শন শেষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাংবাদিকদের বলেন, এখানে এসে আমার মন ভরে গেল। সমাজে রশীদ সাহেবের মত মানুষের বড়ই প্রয়োজন। এখানকার নাগরিকরা সত্যিই ভাগ্যবান। তিনি সত্যিই একটি চমৎকার পরিকল্পনা নিয়ে এমন মহতি কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। এ জন্যে আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে সাধুবাদ জানাই। এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এম এ রশীদ বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আমি বড় হয়েছি। অবহেলিতও জনপদে শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতাম স্কুল জীবন থেকে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। গ্রামের মানুষ আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নানাভাবে সহায়তা করে। তিনি এই কাজের ধারা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।