‘বন্দি’ মাকে হাজির করতে ওসিকে নির্দেশ

0

বিশেষ সংবাদদাতা॥ চার সন্তানের মা আছিয়া আক্তার। থাকেন বড় ছেলের কাছে। তবে অন্য সন্তানদের দাবি, তাদের মাকে বড় ছেলে আটকে রেখেছেন এবং মায়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিচ্ছেন না। আছিয়া আক্তারকে কেন আটকে রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে সঙ্গে নিয়ে বড় ছেলে রবিউল মোর্শেদ মিলনকে ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ এবং মাকে আটকে রাখার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পরও রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত দিনে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় বড় ছেলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রুলে রবিউল মোর্শেদ মিলনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমানার অভিযোগ আনা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর মিরপুরের আরামবাগে বড় ছেলের বাসায় গৃহবন্দি বৃদ্ধা আছিয়া আক্তারকে আদালতে উপস্থিত করতে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পল্লবী থানার ওসিকে আগামী ২০ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় ওই বৃদ্ধা মাকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তৌফিক ইমাম। মাকে আটকে রাখার ঘটনায় প্রতিকার ও দেখাভালের জন্য অনুমতি দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে এক ভাই ও দুই বোনের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে ছোট ভাই রাফসান মোর্শেদ ও পারভীন আক্তারসহ দুই বোনের করা আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইমাম (টিপু)। শুনানিতে তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার গালিব আমিদ। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল (এম আর) চৌধুরী। ব্যারিস্টার তৌফিক ইমাম টিপু বলেন, মিরপুরে এক বৃদ্ধা মাকে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগে তার তিন ছেলেমেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানি নিয়ে মাকে এককভাবে আটকে রাখা এবং অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ না দেওয়া এবং কেন অবৈধভাবে আটক রাখা হয়েছে- তা জানতে চেয়ে আটকে রাখা বড় ছেলে ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেন। একইসঙ্গে বড় ছেলেকে ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় মাকে সঙ্গে নিয়ে সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্ধারিত দিনে তিনি মাকে নিয়ে হাজির হননি। পরে আদালত হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আদেশের কপি পাঠানোর পরে নিয়ম অনুযায়ী সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু মাকে নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার বিষয়ে আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি। অর্থাৎ মাকে নিয়ে বড় ছেলে আদালতে উপস্থিত হননি। এরপর বড় ছেলে রবিউলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার এ রুল জারি করে, একইসঙ্গে পল্লবী থানার ওসিকে ২০ অক্টোবর ওই বৃদ্ধা মাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত। মিরপুর আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা আছিয়া আক্তারের চার সন্তান। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। ২০১১ সালের ২৭ মে ছোট ছেলে রাফসান মোর্শেদের বাসা থেকে বড় ছেলে মাকে নিজের হেফাজতে নিয়ে যান এবং অন্য সন্তানদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে গৃহবন্দি করে রাখেন। এরপর থেকে তিন ভাই-বোনকে তাদের মায়ের সঙ্গে কোনোভাবেই দেখা করতে দেয়া হয়নি। দেখা করার চেষ্টা করলে বাসার গেট থেকে তাদের বের করে দেওয়া হতো। এক পর্যায়ে নিরূপায় হয়ে তারা সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং পুলিশের সহায়তায় গত দু’বছর আগে শুধু দু’বার মায়ের সঙ্গে তারা দেখা করেন। রিট আবেদনকারীরা জানতে পারেন, তাদের বৃদ্ধা মা অত্যন্ত অসুস্থ এবং তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে না। তারা বিষয়টি পুলিশ এবং স্থানীয় গণ্যমান্যদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন মাতৃস্নেহ বঞ্চিত তিন সন্তান।