উৎসব-আনন্দে স্কুল খোলার ঘণ্টাধ্বনি

0

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা॥ ৬১ সপ্তাহ পরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো খুলেছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্কুল-কলেজ। অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ছাত্র-শিক্ষক সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিনে প্রাণের উচ্ছাসে মেতে উঠেছিলেন। অনেক স্কুলে ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করেন শিক্ষকরা। রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, পুলিশ লাইন স্কুল, মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আমলাসদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘ দেড় বছর পর কুষ্টিয়ার স্কুল-কলেজগুলো খোলা হয়েছে। জিলা স্কুলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের। সরকারি বালিকা বিদ্যালয় স্কুলের গেট সাজানো হয়েছে রং-বেরঙের বেলুন দিয়ে। ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দীর্ঘ দিন পর চিরচেনা পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বইছে। স্কুলে-স্কুলে তৈরি হয়েছে মিলন মেলা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কুষ্টিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও নানা নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র রাফি স্কুলের বারান্দায় পা রেখে খুশিতে ঝলমল করছিল। এই প্রতিবেদককে রাফি জানালÑআমরা চাই নিয়মিত ক্লাস হোক। সরকার শর্ট সিলেবাস দিয়েছে সেগুলো সময়মতো সম্পন্ন করা হোক। তারপর পরীক্ষা হোক। বহুদিন পর স্কুল খোলার কারণে আজ আমাদের স্কুল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মনে হচ্ছে, আমি একটি উৎসবে যুক্ত হয়েছি।’ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসসুম বলেন, করোনা ভাইরাসের জন্য অনেক দিন স্কুল বন্ধ ছিল। বহু প্রতীক্ষার পর আজ আমাদের স্কুল খুলেছে। এজন্য অনেক ভাল লাগছে। নিয়মিত ক্লাস করতে পারব ভেবেই ভাল লাগছে। কুষ্টিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, স্কুল খুলেছে। অনেক ভালো লাগছে। স্যার ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। খুবই ভালো লাগছে। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সিজান মাহমুদ সিয়াম বলেন, মনে হচ্ছে জেলখানা থেকে ছাড়া পেলাম। ঘরবন্দি জীবন কষ্টের ছিল। আজ আবারও স্কুলের চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ঝুলতে দেখা যায় করোনা থেকে সুরক্ষায় সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নানা ফেষ্টুন। শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। স্কুলে একটি কক্ষকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও আইসোলেশনের জন্য প্রস্তত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অভিভাবক জামিল হোসেন বলেন, ছেলে-মেয়েদের প্রথম দিনে স্কুলে যেতে যে আনন্দ, বাকি জীবন যেন এমন আনন্দ নিয়েই যায়। স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় সন্তানদের পাশাপাশি আমরাও খুশি। আমলাসদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর পর আমাদের স্কুল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা অলস সময় পার করেছি। এখন আবার ব্যস্ততা বেড়েছে। খুব ভালো লাগছে।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. এফতে খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল খুলেছি। আগে থেকেই আমাদের সকল প্রস্ততি ছিল। আজ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় স্কুলের প্রাণ ফিরেছে। শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা বরণ করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। স্কুলে উৎসবের আমেজ বইছে। খুব ভালো লাগছে। কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহা. মোজাম্মেল হক বলেন, স্কুল খোলা উপলক্ষে স্কুলের গেটে রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার জায়েদুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়ায় ১২৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক যোগে পাঠদান শুরু হয়েছে। লম্বা সময় ধরে বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। আনন্দে উদ্বেলিত শিক্ষার্থীরা। তিনি আরো বলেন, জেলার ৭৪টি কলেজ, ৩০২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৫টি মাদ্রাসা ও ৮০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক যোগে পাঠদান শুরু হয়েছে।