প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না

0

বাজারে সরকারি চিনির সরবরাহ নেই বললেই চলে। আধুনিকায়নের জন্য গেল নভেম্বর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে সরকারের ছয় চিনিকল। উৎপাদনে থাকা বাকি ৯টি চিনিকলও চলছে ঢিমেতালে। আখস্বল্পতায় এসব কারখানা এই মৌসুমে বন্ধ ছিল সাত থেকে আট মাস। ফলে চিনির বাজার পুরোপুরি বেসরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। গত রমজান মাসের শুরু থেকেই দামের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
দেশের চিনকলগুলোর দুর্গতি অনেক আগে থেকেই। কোনোভাবেই চিনিকলগুলো লাভের মুখ দেখতে পারছে না। কমাতে পারছে না উৎপাদন খরচ। দেশে বেসরকারি খাতে অপরিশোধিত চিনি থেকে চিনি উৎপাদন ব্যয় কম হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে নাকি খরচ হয় ১৬৫ টাকা বা তার বেশি। অথচ ব্রাাজিলে এক কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ ৪০ টাকা, ভারতে ২৩ থেকে ২৮ টাকা, ইউরোপে ৩২ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ টাকা। বাংলাদেশে খরচ এত বেশি কেন? আখস্বল্পতা অর্থাৎ কাঁচামালের অভাবে প্রায় সারা বছর কারখানা বন্ধ থাকে। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হয়। অন্যান্য খরচও আছে। সে কারণেই নাকি লোকসান হয়। অথচ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দুই মেয়াদে এবং চলতি মেয়াদে শেখ হাসিনা চিনিকলের লোকসান কাটিয়ে উঠতে কিছু নির্দেশনা দেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের লোকসান কাটিয়ে উঠে মুনাফায় আসতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়নই যথেষ্ট ছিল। তাঁর নির্দেশনা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটি দেখার সময় এসেছে।
চিনিকলগুলো দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার। লাভ-লোকসানের বাইরে সংস্থাটির একটি সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটির সহায়ক ভূমিকা পালন করার সুযোগ ছিল। অথচ অভিযোগ রয়েছে, উৎপাদন কম হলেও বেসরকারি খাতের চিনিকলগুলোকে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ দিতে গুদামে রেখেই হাজার কোটি টাকার ওপরে চিনি নষ্ট করা হয়েছে। বেসরকারি চিনিকলগুলো লাভজনক হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে কেন লোকসান হচ্ছে? কর্তৃৃপক্ষের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, আখস্বল্পতা, বহু পুরনো যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদন এবং আখ প্রক্রিয়াকরণে অদক্ষতাও রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে লোকসানের কারণ বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর চিনি বিপণন ও বাজারজাতকরণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আপৎকালীন সংকট মোকাবেলার নামে এই মজুদের আড়ালে চিনি সিন্ডিকেটকে অধিক মুনাফার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। চিনির বাজারে একচেটিয়া বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারি চিনিকলগুলো চালু করুন।