বাজারে অস্থিরতা বাড়ছেই

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। এদিন সবাই একটু ভালো খাওয়ার চিন্তা করে। সেইসঙ্গে আবার মাসের শুরু। তাই ছুটির দিনে ভিড় জমেছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। তবে বাজারে গিয়ে স্বস্তি নেই ভোক্তা সাধারণের। কারণ অধিকাংশ পণ্যের দাম নাগালের বাইরে। গতকাল সকালে কচুক্ষেত বাজারে একটি মুদি দোকানে মসুর ডালের দাম জিজ্ঞেস করছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী তাওহীদুল ইসলাম। কিন্তু দাম শুনে যেন চমকে গেলেন তিনি। এক সপ্তাহেই আরও ৫ টাকা বেড়ে গেছে মোটা দানার মসুর ডালের দাম।
গত সপ্তাহে যা কেজিতে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, ব্যবসায়ীরা গতকাল এই পণ্যটির দাম হেঁকেছেন ৮৫ টাকা। অথচ এক মাস আগেও এর দাম ছিল কেজিতে ৭০ টাকা। দাম বেড়ে যাওয়ায় ১ কেজির জায়গায় আধা কেজি মসুর ডাল কিনলেন তাওহীদুল ইসলাম। শুধু ডাল নয়, বাজারে বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম এখনো চড়া। ফলে তাওহীদুল ইসলামের মতো সব ভোক্তারাই পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষের। দামতো কমছেই না, বরং দফায় দফায় আরও বেড়েই চলছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।
এদিকে, আমদানির খবরেও স্বস্তি ফেরেনি চালের বাজারে, অন্যদিকে নতুন করে বেড়েছে পিয়াজ, মুরগি, ডিমসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দামও। গতকাল রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, কাওরান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা এবং পাকিস্তানি সোনালী মুরগির দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একইসঙ্গে প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে আমদানি করা শুকনা মরিচ, দেশি হলুদ, দেশি আদা ও চিনি। গতকাল কাওরান বাজার ও কচুক্ষেত বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। পাকিস্তানি সোনালী মুরগি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে হোটেল-রেস্তঁরাগুলো খোলায় মুরগির চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে খুচরা দোকানে হালিপ্রতি ডিম কিনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায়।
এছাড়া সবজির মধ্যে শিম, ফুলকপি, গাজর, টমেটো, পটোলসহ অনেকগুলো সবজির দাম চড়া। কেজিতে শিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। ছোট আকারে ফুলকপি পিচ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫০ টাকা। টমেটো ও গাজর কিনতেও ক্রেতাদের কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে গুনতে হচ্ছে। এছাড়া পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এছাড়া বাজারে ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ওদিকে, সরকার শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নিলেও বাজারে এখনো তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং চালের বাজার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল কাওরান বাজারে পাইকারি দরে মিনিকেট চাল ৫৮ থেকে ৬০ কেজি, আটাশ ৪৭ থেকে ৫০, নাজির ৬২ থেকে ৬৮ ও স্বর্ণা ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫, আটাশ ৫০ থেকে ৫৫, স্বর্ণা ৫০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের চাল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে এ চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। এছাড়া বর্তমানে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। এক বছর আগেও এসব চালের দাম ছিল ৪২ থেকে ৪৮ টাকা। ওদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। এখন বাজারে খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৩০ টাকায়। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। তেলের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে দেশি ও আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি পিয়াজের দাম ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পিয়াজের দাম ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৪০ দশমিক ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দামও গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া দাম বেড়েছে আমদানি করা শুকনা মরিচ, দেশি হলুদ এবং দেশি আদার।