ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষের উপর নকশা পরিবর্তন করে সেতু নির্মাণের প্রতিবাদে গণসমাবেশ

0

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) ॥ ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের উপর নকশা পরিবর্তন করে দ্বিতীয় ব্রিজ নির্মাণ ও সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে নির্মিত ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের দাবিতে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিকরগাছা শহরে সেতু সংলগ্ন অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহিম। এ সময় বক্তব্য রাখেন, আন্দোলন সংগ্রামের নেতা যশোর সরকারি এম এম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আফছার আলী, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অনিল বিশ^াস, সাহিত্যিক হোসেন উদ্দীন হোসেন, ভৈরব বাঁচাও আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম নেতা অ্যাড. আমিনুর রহমান হিরু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রশীদ, আমানুল কাদির টুল্লু, উপাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দিন, মফিজুর রহমান নান্নু (কেশবপুর), কপোতাক্ষ ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি মাস্টার বিমল কুমার ঘোষ, পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রশিদুজ্জামান, কপিলমুনি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যাপক রেজাউল করিম, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ঝিকরগাছা উপজেলা সভাপতি মোখলেছুর রহমান কেটি ও সামছুল আলম বাসার প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঝিকরগাছা পৌর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আরমান হোসেন কাকন, উদীচী গদখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক ও পূজা পরিষদের নেতা শুভাষ ভক্ত, উদীচী গদখালী শাখার সহ-সভাপতি শাহিন আহম্মেদ, কপোতাক্ষ আন্দোলনের নেতা শহিদুল ইসলামসহ সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
গণসমাবেশে বক্তারা উল্লিখিত ব্রিজ নির্মাণের নকশা পরিবর্তনের সাথে জড়িত প্রকৌশলীর বিচার দাবি করে বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নৌযান চলাচল উপযোগী করে ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণ করাসহ নির্মাণাধীন সেতুটি পুনঃনির্মাণ এবং নদী খননের সময় মাটি কেটে সীমানার বাইরে ফেলতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ারি করেন। এছাড়া কপোতাক্ষ নদের খননসহ সকল কাজে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা রাখারও আহবান জানান তারা।
জানা গেছে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা কপোতাক্ষ নদের উপর গেজেট বহির্ভূত ও বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র ছাড়াই প্রায় দেড় শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬ লেনের সেতুর অর্ধেক অর্থাৎ ৩ লেনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু সেতুটি গেজেট বহির্ভূতভাবে নির্মাণের কারণে অনেকটা নিচু হয়েছে। জানতে পেরে গত ২৯ জুলাই নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্ম-পরিচালক আশরাফ হোসেন পরিদর্শনে আসলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। এদিন তিনি স্থানীয় গরুহাটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা, স্থানীয় সংবাদকর্মী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় যুগ্ম-পরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের উপর ৩ লেনের ২টি সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)’র গেজেট মানা হয়নি। এমনকি সেতু নির্মাণের আগে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদনও নেয়া হয়নি। তিনি উপস্থিত সকলকে সাথে নিয়ে পানির বর্তমান স্তর থেকে সেতুর গার্ডার পর্যন্ত মেপে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। সেখান থেকে ফিরে ১ আগস্ট নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্ম-পরিচালক আশরাফ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মাণাধীন সেতুটি গেজেট বহির্ভূত ও বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র ছাড়াই ৬ লেনের অর্ধেক ৩ লেন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেছেন। সেতুটি নিচু হওয়ায় দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু করার আগেই বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে ছাড়পত্র নেয়ার কথা বলা হলেও তা না করেই দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু করেছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জানতে পেরে সম্প্রতি যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন নির্মাণাধীন সেতু পরিদর্শন করেন এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে বলেন। ফলে আপাতত দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।