বিকল্প সোশ্যাল অ্যাপের অগ্রগতি নেই

0

কাজী সোহাগ॥ বিশ্বের সেরা তিনটি জনপ্রিয় অ্যাপ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও জুমের বিকল্প তৈরির ঘোষণা দেয়া হয়েছে আজ থেকে ৪১ দিন আগে। দেশের প্রযুক্তি জগতে ওই ঘোষণা ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। আগ্রহও দেখা যায়। প্রতিবেশী ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশের ওই ঘোষণা ফলাও করে প্রচার করা হয়। ঘোষণা দেয়া হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ওই তিনটি অ্যাপ তৈরির ঘোষণা দেয়। মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ পর্যন্ত অ্যাপ তৈরি করতে কোনো টিম গঠন করা হয়নি। অতীতে দেখা গেছে, করোনা ভ্যাকসিনের জন্য যে সুরক্ষা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে।
এরপর একটি রূপরেখা দাঁড় করানো হয়। সে আলোকে সুরক্ষা অ্যাপটি নির্মাণ করা হয়। বিকল্প অ্যাপ তৈরির ঘোষণার ৪১ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের বৈঠক হয়নি। আগামী এক মাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যে মিটিং শিডিউল রয়েছে তাতে বিকল্প অ্যাপ তৈরি নিয়ে কোনো মিটিং ডাকা হয়নি। কত দিনের মধ্যে বিকল্প অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হবে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কেউ কিছু বলতে পারেননি। তারা জানান, উপর থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এলে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। এ প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শহিদুল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, জনপ্রিয় তিনটি অ্যাপসের বিকল্প অ্যাপস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। আগামী যে কয়দিনের মিটিং শিডিউল তৈরি হয়েছে তাতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। ঘোষণা অনুযায়ী আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ফেসবুকের বিকল্প নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম ‘যোগাযোগ’ হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প হিসেবে ‘আলাপন’ এবং জুমের বিকল্প ‘বৈঠক’ নামের একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ২৪শে জুলাই উইমেন ই-কমার্স (উই) আয়োজিত ‘এন্টারপ্রেনারশিপ মাস্টারক্লাস সিরিজ ২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ ঘোষণা দেন। ওই সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে দেশের উদ্যোক্তারা তথ্য, উপাত্ত ও যোগাযোগের জন্য নিজেদের মধ্যে একটি নিজস্ব অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও গ্রুপ তৈরি করতে পারবেন। উদ্যোক্তাদের বিদেশনির্ভর হতে হবে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাকালে পরিস্থিতি বিবেচনায় যে যার মতো অ্যাপ বানাচ্ছেন। প্রচার করছেন ঢাকঢোল পিটিয়ে। বলা হচ্ছে এসবই জনস্বার্থে। কিছুদিন যেতে না যেতেই হারিয়ে যাচ্ছে সেসব অ্যাপ। অ্যাপ তৈরি করতে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। খরচ করছেন অনেক টাকা। দিনশেষে বেশির ভাগ টাকাই যাচ্ছে জলে। বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থে এক বা একাধিক অ্যাপ তৈরি করতে খরচ করছেন লাখ থেকে কোটি টাকা। এসব অ্যাপ পরিচালনা করতে আবার বাড়তি লোকবল ও বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে তাদের। এসব দিক বিবেচনা করে ও সরকারি অর্থ ব্যয় কমাতে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা এখন মত দিচ্ছেন জাতীয় কমিটি গঠন করতে। প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শের জন্য এ কমিটি গঠনের কথা বলছেন তারা। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বর্তমানে ১০৬টি দেশে ৫৩ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত এক বছরে বাংলাদেশে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে। এ সময়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক কোটি। তার চেয়ে বেশি বেড়েছে মেসেঞ্জার ব্যবহারকারী। ইস্টাগ্রাম, লিংকডইনের ব্যবহারও বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনার প্ল্যাটফরম নেপোলিয়নক্যাটের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইস্টাগ্রাম, লিংকডইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রতি মাসের হিসাব দিয়ে থাকে পোল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাট। তাদের হিসেবে, এ বছরের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ নারী এবং পুরুষ ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা ২ কোটি ১২ লাখ। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার (জনসংখ্যার ২২ দশমিক ৩ শতাংশ)। সে হিসাবে, গত এক বছরে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৯৭ লাখ ৫৫ হাজার। এ সময় নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। অন্যদিকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার (সংক্ষেপে হোয়াটসঅ্যাপ) সর্বাধিক জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ ও ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল পরিষেবা। প্রায় ২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে এই অ্যাপসটির যা বর্তমানকালের সমধর্মী অন্য কোনো অ্যাপস-এর থেকে বেশি। বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনে এই মেসেঞ্জার ব্যবহার করা যায়। শুধু চ্যাটই নয়, এ মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ছবি আদান-প্রদান, ভিডিও ও অডিও মিডিয়া বার্তাও আদান-প্রদান করা যায়। মেসেঞ্জারটি অ্যাপলের আইওএস, ব্ল্যাকবেরি, অ্যান্ড্রয়েড, সিমবিয়ান ও উইন্ডোজ ফোনে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে ২০১৩ সালে জুমের পথচলা শুরু হলেও কোম্পানির ভাষায় ২০২০-এ এই কোম্পানি তার দুর্দান্ত পথচলা শুরু করেছে। সহজে ব্যবহারযোগ্য ও সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে ফের সংযোগের সুবিধার মাধ্যমে গ্রাহকদের নজর কেড়েছে জুম।