যশোরে নিবন্ধিত সাড়ে ৫ লাখ মানুষ করোনার টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন

0

বিএম আসাদ ॥ যশোর জেলায় করোনা টিকার ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। নিবন্ধিত ৫ লাখ ৬৪ হাজার ২শ জন এখনো টিকা না পেয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে যশোরের সিভিল সার্জন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা চেয়ে ঢাকায় চাহিদা পাঠিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলা যশোর হচ্ছে করোনা সংক্রমণের দিক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা। করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য এ জেলায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় টিকা প্রদান কার্যক্রম। কিন্তু টিকা গ্রহণের জন্য যত সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করেছেন, তত সংখ্যক লোককে টিকা দিতে পারেনি। এ অবস্থার মধ্যে এ জেলায় দেখা দিয়েছে টিকার ব্যাপক সংকট। যা নিয়ে টিকার জন্য নিবন্ধিত ৫ লাখ ৬৪ হাজার ২শ লোক গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত টিকা দিতে পারেননি। নিবন্ধন করা লোকজন টিকা না পেয়ে শুধু অপেক্ষায় দিন গুনছেন কবে তারা টিকা দিবেন আর মোবাইল ফোনে কবে তাদের মেসেজ আসবে ?
যশোর জেলায় অ্যান্ট্রেজেনিকার কোভিশিল্ড টিকা গতকাল মজুদ ছিল ৪ হাজার ডোজ। সিনোফার্মের টিকা মজুদ রয়েছে ১ হাজার ৫শ ডোজ। যা নিতান্তই অপ্রতুল। যেখানে প্রতিদিন টিকা দেয়া হতো ৫ হাজার জনকে। তখন কমিয়ে সেখানে দেয়া হচ্ছে ৭/৮শ জনকে। গতকাল সিনোফার্মের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ২৪৩ জনের। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় ৩৪১ জনের। অ্যাস্ট্রেজেনিকার কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৬১৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১১০ জন। টিকার পর্যন্ত মজুদ না থাকার কারণে পরবর্তী ডোজ না আসার কারণে প্রতিদিন অল্প সংখ্যক টিকা দেয়া হচ্ছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে, যশোরে অ্যাস্ট্রেজেনিকার কোভিশিল্ড টিকা এসেছিল ২ লাখ ৩১ হাজার ৯২ ডোজ। এর ভেতর প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৫২৪ ডোজ টিকা। ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬৮ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ টিকা হিসেবে। সিনোফার্মের টিকা এসেছিল ২ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৯ ডোজ। এর ভেতর ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৮৬ ডোজ টিকা প্রথম ডোজ হিসেবে এবং ৩৮ হাজার ৯০৩ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে। সব মিলে মোট অ্যাস্ট্রেজেনিকার ২ লাখ ৩৬ হাজার ডোজ এবং সিনোফার্মের ২ লাখ ৩০ হাজার আসে যশোরে। সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে, টিকা দেয়ার সময় কিছু ডোজ নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর বর্তমানে ৪ হাজার কোভিশিল্ড ও ১ হাজার ৫শ ডোজ সিনোফার্মের টিকা মজুদ আছে। যা দু একদিনের ভেতর শেষ হয়ে যাবে। টিকাদান কেন্দ্র চালু রাখার জন্য স্বল্প পরিমাণ মজুদ টিকার ডোজ কম করে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে পরবর্তীতে আরও টিকা আসা পর্যন্ত টিকাদান কেন্দ্র সচল থাকে। টিকা সংকটের কারণে এ সকল কৌশল অবলম্বন করেছে যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সাথে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সংকট মোকাবিলায় নতুন করে আরও ৪ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৪ ডোজ টিকা চেয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন গতকাল (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। চাহিদাপত্রে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ১০ হাজার ৮১১ ডোজ টিকা, সিনোফার্মের ২ লাখ ৮ হাজার প্রথম ডোজ ও ২ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩ দ্বিতীয় ডোজ টিকা চাওয়া হয়েছে চাহিদাপত্রে। এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন দৈনিক লোকসমাজকে বলেন, স্বল্প পরিমাণ যে টিকা মজুদ আছে তাই দিয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেয়া হচ্ছে। আরও ৪ লাখ ২৭ হাজারের কিছু বেশি সংখ্যক টিকা চেয়ে ঢাকায় চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এর আগে ৩২ আগস্ট খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। তিনি বলেন, টিকা কবে পাওয়া যাবে তা জানি না। তবে টিকা এলে পরবর্তীতে তা নিবন্ধিত লোকজনকে দেয়া হবে।