সেই পাকাঘর ভেঙে মৃতদেহ বের করে দাফন করলো এলাকাবাসী

0

মাগুরা সংবাদদাতা॥ মাগুরা সদরের পৌর এলাকায় এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর গোপনে পাকা বাসভবনের জানালাবিহীন কক্ষে মৃতদেহ রেখে বাইরে থেকে ইটের গাঁথুনি ও প্লাস্টার করে আটকে দেওয়ার আট দিন পর সেই ঘর ভেঙে দিয়েছে এলাকাবাসী। পরে পাশের কাশিনাথপুর গোরস্থানে মৃতদেহ দাফন করা হয়। সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে শহরের কাশিনাথপুর এলাকার কারিগর পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পৌর কাউন্সিলর আসিফ আল আসাদ মেলিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। মৃত ব্যক্তির নাম তৈয়ব আলী মোল্যা (৭৫)। তিনি কাশিনাথপুরের মৃত আরজু মোল্যার ছেলে। তৈয়ব আলী গত রোববার (২২ আগস্ট) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে বাড়িতে মারা যান। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী একতলা বসতঘরের একটি কক্ষে গোপনে মৃতদেহ করা হয়। এই ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় হুলস্থুল শুরু হয়। মৃত ব্যক্তি অজ্ঞাত কোনো ভিন্নমতাবলম্বী আধ্যাত্মিক ব্যক্তির অনুসারী ও ভক্ত ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। পুলিশ, মৃতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, তৈয়ব আলী গত ২২ আগস্ট দুপুর পৌনে ২টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে বাড়িতে মারা যান। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী একতলা বসতঘরের মেঝেতে গোপনে লাশ রেখে দিয়ে বাইরে থেকে প্রবেশপথ ইটের গাঁথুনি ও প্লাস্টার করে আটকে দেওয়া হয়।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, তৈয়ব আলী অবিবাহিত ছিলেন। একটানা ৩০ বছর তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন। এক বছর আগে তিনি শহরের ছোট ভাই হাসেম আলী মোল্যার বাড়িতে আসেন। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন না। মিশতেন না। নিজ হাতে বাড়িতে দুই কক্ষের একটি ভবন তৈরি করেন। একটি কক্ষের জানালা-দরজা থাকলেও আরেকটি কক্ষে কোনো জানালা নেই। মৃত্যুর পর স্বজনেরা গোপনে জানালাবিহীন কক্ষে মৃতদেহ রেখে বন্ধ করে দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থাকলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইসলামের বিধি মেনে গোসল ও জানাজার পর লাশ গোরস্থানে দাফনের জন্য ব্যবস্থা নিতে দাবি জানান এলাকাবাসী। বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জয়নাল আবেদিন রাতে ওই রাড়িতে গিয়ে গোরস্থানে দাফনের পরামর্শ দেন। সোমবার (৩০ অগাস্ট) কাশিনাথপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তৈয়ব আলীর বাড়ির সামনে উৎসুক লোকজন ভিড় করছেন। পুলিশের নির্দেশের পরও লাশ বের করার উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই কক্ষের একটি ভেঙে এলাকার লোকজন মৃতদেহ বের করে আনেন। পুরো দুটি কক্ষই লোকজন ভেঙে গুড়িয়ে দেন। পরে মৃতদেহ কাশিনাথপুর কবরস্থানে জানাজা ছাড়াই দাফন করা হয়। দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন মাগুরা কেন্দ্রীয় কারাগার জামে মসজিদের পেশ ইমাম আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, আটদিন আগে মারা যাওয়া মৃতদেহ থেকে গন্ধ বের হচ্ছিলো। পরে দাফন করা হয়েছে। আগেই জানাজা হয়েছে বলে পরিবার থেকে জানানোর পর নতুন করে আর জানাজার নামাজ পড়ানো হয়নি।
কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন সাজ্জাদ ও ইকবাল হোসেন বলেন, তাকে বাইরে কবরস্থানে দাফন করার দাবি জানান এলাকার লোকজন। কিন্তু তৈয়ব আলীর স্বজনেরা মৃতদেহ নতুন করে বাইরে দাফন না করতে অনড় থাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। একপর্যায়ে এলাকাবাসী দেয়াল ভেঙে লাশ উদ্ধার করে গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করে। মৃতের ছোটভাই হাশেম আলী মোল্যা জানান, বড় ভাই (তৈয়ব) মৃত্যুর আগে নিজ হাতে ঘর ও ঘরের মধ্যে কবর তৈরি করে গেছে। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী লাশ ঘরের মধ্যে রাখা হয়। পরে এলাবাসীর দাবি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মৃতদেহ সরিয়ে গোরস্থানে দাফন করা হয়। মাগুরা পৌর সভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আল আসাদ মেলিন জানান, প্রশাসন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আলেমদের সঙ্গে আলোচনা করে কাশিনাথপুরের কারিগর পাড়ায় মৃত ব্যক্তির মরদেহ ঘর থেকে বের করে গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জয়নাল আবেদিন বলেন, লাশটি ঘর থেকে নিয়ে ইসলামের বিধি মেনে গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।