বৃদ্ধ মাকে গোয়াল ঘর থেকে উদ্ধার করে ছেলের ফ্ল্যাটে তুলে দিলেন ইউএনও

0

এম. এ. রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় গোয়াল ঘরে পুত্রবধূর ফেলে রাখা অসুস্থ মাকে ছেলের ফ্ল্যাট উঠিয়ে দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। রোববার বিকেলে উপজেলার পাশাপোল ইউনয়িনের বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশসহ উপস্থিত হন বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে। রোববার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ অসুস্থ মা আমেনা বেগম (৭০) গোয়াল ঘরের ময়লার মধ্যে মেঝেতে একটি ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে আহাজারি করছেন। গোয়াল ঘরটি ছাদের হলেও তীব্র গরমেও সেখানে নেই কোনো পাখার বাতাসের ব্যবস্থা। তার পাশেই পাকা ছাদের রান্না ঘরে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে তার পুত্রবধূ রান্না করছেন। পাশেই একটি ফ্ল্যাট বাড়ি। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বৃদ্ধ মায়ের পুত্রবধূর কাছে শাশুড়িকে কেন এই ময়লার মধ্যে গোয়াল ঘরে রেখেছেন জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, উনি কাপড়ে প্রসাব-পায়খানা করেন তাই গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে। পরে বলেন, তিনি নিজেই এখানে থাকতে চেয়েছেন।
এ সময় স্থানীয় প্রতিবেশী নারী-পুরুষরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা অভিযোগ করে বলেন, বৃদ্ধার ঝগড়াটে বেটার বৌয়ের ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না।
তারা আরও বলেন, বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে আব্দুল কাদেরের দুই ছেলে। তিনি বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোটটি বিদেশে থাকেন।
এ সময় আমেনা বেগম ইউএনওকে জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি তার চার মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কয়েকদিন আগেও ছিলেন বরিশালে ছোট মেয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে আসেন চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে মেজ মেয়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। জামাই গরিব হওয়ায় তাকে হাসপাতালেও নিতে পারেনি। সেখান থেকে জামাই গত তিন/চার দিন আগে তাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যান। সেদিন থেকেই ছেলে ও তার বৌ বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন। তিনি জানান, যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করছেন। তার দুই চোখ জ্বলে যাচ্ছে। রাতে বা দিনে কোনো সময় তাকে একটি ফ্যানও দেয়া হয়নি। মেয়ের বাড়িতে তিনি ভালোই ছিলেন।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা স্থানীয় প্রতিবেশী কয়েকজন নারীকে সাথে নিয়ে ওই বৃদ্ধা মাকে ছেলের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে তুলে দেন। এরপর ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় পুত্রবধূর কাছ থেকে মুচলেকা নেন যে, বৃদ্ধা আমৃত্যু ছেলের ফ্ল্যাটবাড়ির কক্ষে থাকবেন। কাপড়-চোপড় নষ্ট করে ফেললে ছেলে-পুত্রবধূরা পরিষ্কার করে দেবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, ঘটনাটি খুবই কষ্টদায়ক ও দুঃখজনক। একমাত্র ছেলে নিজের মাকে গোয়াল ঘরে গরুর মলমূত্রের মধ্যে ফেলে রেখেছেন। তিনি বলেন, ওই মাকে ছেলের ঘরে তুলে দেয়া হয়েছে। সোমবার ডাক্তার দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয় অমান্য করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ছেলে ও পূত্রবধূর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।