বাগেরহাটে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, ভোগান্তি প্রসূতির

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ বাগেরহাটে একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। মাত্র দু জন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা নবজাতক ও প্রসূতি মায়েদের। এখানে আসা মুমূর্ষু রোগীদের রেফার করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাগেরহাট সদর হাসপাতালে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৮১ সালে প্রসূতি মা ও নবজাতকদের সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য বাগেরহাট শহরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ২০ শয্যার এই হাসপাতালের জন্য মাত্র ৮টি পদ রয়েছে। পদগুলো হচ্ছে দুইজন চিকিৎসক (মেডিকেল অফিসার-ক্লিনিক এবং মেডিকেল অফিসার-অ্যানেস্থেশিয়া), একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা, দুইজন সহকারী নার্সিং অ্যাটেন্ডেন্ট, একজন পিয়ন কাম চৌকিদার, একজন গাড়িচালক, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এসব পদের মধ্যে পরিকল্পনা পরিদর্শিকার পদ শূন্য রয়েছে। দুইজন চিকিৎসক এবং দুইজন সহকারী নার্সিং অ্যাটেন্ডেন্ট অসুস্থ।
জানা গেছে, জেলার একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র হওয়ায় প্রতিদিন শতাধিক শিশু ও প্রসূতি মায়েরা আসেন এই হাসপাতালে। মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি স্বাভাবিক ডেলিভারি হয় এখানে। করোনার মধ্যে গত মাসেও ২৫টি স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে। ২০২০ সালে স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে ৩৭৭টি। তবে চিকিৎসক অসুস্থ থাকায় ২০১৮ সালের পর থেকে এখানে সিজার বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসা শিশু ও প্রসূতি মায়েদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। হাসপাতালে জন্ম নেওয়া অসুস্থ শিশুদেরকে স্থানান্তর করতে হয় অন্য জায়গায়। প্রত্যন্ত গ্রাম ও দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা প্রসূতি মা ও শিশুরাও পড়ছে বিপাকে। সদর উপজেলার গোড়াপাড়া গ্রাম থেকে আসা রাহিলা বেগম নামের এক মা বলেন,‘কয়েকদিন ধরে আমার ছেলের জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এখানে আসলে চিকিৎসকরা বললেন শিশু বিশেষজ্ঞ নেই,অন্য জায়গায় নিয়ে যান।’ মগড়া গ্রাম থেকে আসা শিউলী বেগম বলেন, ‘প্রসব বেদনা উঠলে ছোটবোনকে এখানে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সিজার না হওয়ায় সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললেন। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে যদি সিজার না হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব। আমরা তো গরিব মানুষ।’
এদিকে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানে গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা। অর্গানোগ্রাম সংশোধন করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। একসময় মানুষ ভাল সেবা পেত। কিন্তু বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র মা ও শিশুরা।’ জরুরি ভিত্তিতে অর্গানোগ্রাম সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বাগেরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. আব্দুস সামাদ বলেন,‘নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা প্রতিদিন অনেক রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এই কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রম সচল রাখতে আমরা উপজেলা থেকে চারজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে দুইজন পিয়ন কাম চৌকিদার এবং দুইজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। এরপরেও বেশি অসুস্থ শিশু ও সিজার প্রয়োজন হওয়া রোগীদেরকে স্থানান্তর করতে হয় আমাদের। বাগেরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসা সকল রোগীদের সেবা দিতে এই কেন্দ্রে অন্তত ৪ জন চিকিৎসক,৮ জন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা, ওয়ার্ড বয়, নার্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. আব্দুস সামাদ। বাগেরহাট পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ কুমার দাস বলেন,‘বাগেরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। অন্যান্য স্টাফের চাহিদা পূরণের জন্য অন্য জায়গার লোক দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সারাদেশে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা ও পিএসসির মাধ্যমে চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবলের সংকট পূরণ হবে।’