টেন্ডার জটিলতায় যশোর জেলা পরিষদ চত্বরে নষ্ট হচ্ছে বিপুুল অর্থের কাটা গাছ

0

তহীদ মনি ॥ যশোর জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন সড়ক থেকে উদ্ধারকৃত কোটি কোটি টাকার কাঠ অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে এ কাঠ ক্রয়ে অংশ নিতে চান না ব্যবসায়ীরা। ফলে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কাঠগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যশোর জেলা পরিষদের প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ টকা মূল্যের ৬০ হাজার ঘনফুট কাঠ বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। জেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে দিনের পর দিন পড়ে থাকা কাঠ ছাড়াও মনিরামপুর, কেশবপুর ও চৌগাছায় প্রচুর কাঠের গুঁড়ি ও লগ পড়ে রয়েছে। এর মোট পরিমাণ ৬০ হাজার ৮শ’ ১১ ঘনফুট। এছাড়াও ডালপালা ও জ্বালানি কাঠ রয়েছে আরও ৫শ’ মণ। এসব কাঠ যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা, রাজারহাট-চুকনগর সড়ক ছয় লেন করার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কর্তৃক উপড়ে ফেলা হয়েছে। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছে। কারণ গাছগুলো জেলা পরিষদের। নিয়মানুসারে ছয় লেন বিশিষ্ট সড়ক তৈরির ক্ষেত্রে রাস্তার সেন্ট্রাল লাইন থেকে সাড়ে ছয় মিটারের মধ্যে অবস্থিত সকল গাছ অপসারণের জন্যে সড়ক বিভাগ অনুরোধ করে। তবে, জেলা পরিষদের একটি সূত্রের দাবি, গাছ অপসারণের স্বার্থে চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথেই রাজাহাট-চুকনগর সড়কে কর্মরত ঠিকাদারদার তাদের গাছ উপড়ে ফেলে।
সূত্রে মতে, ওই সড়কগুলো ছাড়াও ভিটাবল্লা, হাজিরবাগ ও ঘুরুলিয়া থেকে উদ্ধার করা গাছও টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ ২ হাজার ৪২৮টি গাছের ৬০ হাজার ৮১১ ঘনফুট কাঠ ও ৫শ’ মণ জ্বালানি মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ ১৬ হাজার ৬২৫ টাকা। নিয়মানুসারে মূল্য নির্ধারণের পর জেলা পরিষদের অভ্যন্তরীণ সভায় উপস্থাপন করতে হয়। পরবর্তীতে জেলার মাসিক সমন্বয় সভায় অনুমোদন লাভ করলে বিভাগীয় সভায় উপস্থাপন ও চূড়ান্ত অনুমোদনের পর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। বর্তমানে এই কাঠ ও জ্বালানির বিষয়ে গত ২৬ জুলাই মাসিক সভায় উপস্থাপিত হয়। ২৮ জুলাই মাসিক সমন্বয় সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে খুলনা বিভাগীয় সভায় পাঠানো হয়েছে।
তবে, যশোর জেলা পরিষদের একাধিক সূত্রের দাবি, বনবিভাগ কর্তৃক যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, বাজার মূল্যের সাথে তার কোন সামঞ্জস্যতা থাকে না। তাই বেশিরভাগ টেন্ডার ক্রেতা বা খরিদদার পাওয়া যায় না। এ কারণে পুনঃমূল্য নির্ধারণ করে রি-টেন্ডার করতে হয়। ততোদিনে কাঠের গুণগতমান নষ্ট হয়। দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় পড়ে প্রতিষ্ঠানেরও আর্থিক ক্ষতি হয়। অতীতে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, কাঠও নষ্ট হয়েছে। মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক রেখে জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, এলজিইডি বিভাগের একজন প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের একজন প্রতিনিধি, বনবিভাগের ডিএফও বা তার প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ে কমিটি করতে হয়। তবে, মাপ ও দাম সাধারণত বন বিভাগ নির্ধারণ করে দেয়। জেলা পরিষদ অফিসে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট ছক বনবিভাগের নেই। ২০১৩ সালে তারা একটি দরের তালিকা দিলেও তা অনুসরণ করা হয় না ঠিকমতো। ফলে, কাঠের দাম নির্ধারণ হলেও টেন্ডারে ক্রেতা পাওয়া যায় না।
এসব বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, বর্তমানের সংরক্ষিত কাঠ ও জ্বালানি টেন্ডার প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে টেন্ডারে ক্রেতা পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। কাঠ যারা কিনবেন তাদেরকে নির্ধারিত মূল্যের সাথে আরও ৯ শতাংশ ভ্যাট ট্যাক্স দিতে হবে। সব মিলিয়ে যে দাম দাঁড়াবে তাতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারেন না। এই আশঙ্কা থেকেই টেন্ডারে কেউ অংশ নিতে চায় না। যার কারণে ইতিপূর্বে অনেক টেন্ডার বাতিল করে রি-টেন্ডার করতে হয়েছে।