ফাইভজিতে প্রস্তুত সরকার, যেকোনো দিন চালু হবে ঢাকায়

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥ এগিয়ে যাচ্ছে সময়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্মুক্ত হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির দুয়ার। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। বরং প্রযুক্তি বিশ্বের এগিয়ে যাওয়ায় এখন রোল মডেল।
    ফেব্রুয়ারি ২০১৮। দেশে চালু হয় চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবা। ইতোমধ্যেই এই নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। অবশ্য সেবার নিয়ে কোথাও কোথাও রয়েছে অভিযোগ। চলছে মান উন্নয়ন।
    তবে ফোরজি-তেই থেমে থাকেনি সরকার। রোলআউটের আগেই বিশ্বে প্রথম কাতারে থাকতে ২০১৯ থেকেই পঞ্চম প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। সর্বশেষ গত ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’ য় প্রদর্শন করা হয় ফাইভজি।
    সম্মেলন কেন্দ্র থেকে এবার ধাপে ধাপে লাল-সবুজের পতাকার পুরোটা জুড়েই সেবা শুরুর জন্য প্রস্তুত সরকার। এখন প্রয়োজন টেলিকম অপারেটরদের সবুজ সঙ্কেত বললেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, আমাদের দিক থেকে আমরা বলতে পারি ফাইভজি চালু করার জন্য যে পরিবেশ দরকার তার শতভাগ আমরা প্রস্তুত আছি। তার জন্য যে স্পেকট্রাম প্রয়োজন তা আমরা খালি করে রেখেছি এবং আমাদের অপারেটররা যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে কোন দিন তারা ফাইভজি চালু করতে পারে’।
    দেশে ফাইভজি চালু করতে চাহিদা-যোগানের ব্যবসায় হিসাব-নিকাশে বেসরকারি তিন অপারেটরের দিকে তাকিয়ে নেই সরকার। যে কোনো সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিসেবা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের মাধ্যমে সবার আগেই পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা চালু করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
    ‘‘মন্ত্রী বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ফাইভজি চালুর। ফোরজি নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের প্রত্যেকের ফাইভজি চালু করা সক্ষমতা আছে। তবে তারা ফাইভজি চালু করবে কিনা সেটা তাদের ব্যাপার। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি ৩ টার মধ্যে ১-২ টার আগ্রহ এখনি চালু করার’’।
    তবে ব্যবহার উপযোগিতার সীমাবদ্ধতার কারণে ফাইভজি সেবা চালু হলেও সহসাই এর স্বাদ নিতে পারবেন না ঢাকার বাইরের মানুষ এমনটাই জানান মোস্তাফা জব্বার।
    ‘‘এ মুহূর্তে আমরা ঢাকার বাহিরে ফাইভজির কথা চিন্তা করছি না কারণ আমার কোন অপারেটর বিজনেস বা সক্ষমতা হিসেবে ঢাকার বাহিরের এলাকাতে এখনো পর্যন্ত চিহিৃত করতে পারে নাই যে এ এলাকায় ফাইভজির দ্রুত এক্সপানশন হতে পারে। তাই ফাইভজি প্রধানত ঢাকা কেন্দ্রিক থাকছে। ইকোনমিক জোনে ফাইভজি সেটআপ করা আছে তার মধ্যে ৬ টায় ইত্যেমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ জোনগুলোতে আমরা ফাইভজি দিচ্ছি যাতে করে ফাইভজির অভাবে ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়’’।
    ফোরজির তুলনায় ফাইভজিতে ইন্টারনেটের গতি হবে পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি। ফাইভজিতে অনেক কম বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে অনেক বেশি মানসম্পন্ন সেবা ও দ্রুতগতি নিশ্চিত করা সম্ভব। এর ফলে একিদিকে যেমন টেলিচিকিৎসা, টেলিক্লাসরুমের মতো পদ্ধতিগুলো জনপ্রিয় হবে; অপরদিকে একের পর এক উন্মোচিত হবে ‘স্মার্টসিটি’র নতুন নতুন সেবা। তাই ই-মেইল করা কিংবা ফেসবুকারদের কাছে এর আবেদন নেই বলে মন্তব্য করলেন এই প্রযুক্তি বোদ্ধা।
    ‘‘ফাইভজি কনজুমার প্রোডাক্ট না, ফোরজির মাধ্যমে ইমেইল, ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করছি আমরা। ফাইভজি কিন্তু এ কাজের জন্য না। সাধারন মানুষের জন্য আপাতসৃষ্টিতে ফোরজি যথেষ্ট, তার ফাইভজি দরকার নাই। ফাইভজিতে সুবিধা অনেক বেশি।’’
    দেশে এখনো স্মার্টফোনের তুলনায় ফিচার ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেশের মানুষ ফাইভজিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে না এবং শুধু ঢাকায় চালু হলে ডিজিটাল বৈষম্যেরও আবকাশ থাকছে না বলে মনে করেন মোস্তাফা জব্বার।
    ‘‘ফাইভজি পুরো দেশে চালু করার ফলে সে পরিমান গ্রাহক পাওয়া যাবে কিনা সেটা চিন্তা করার বিষয়। পাশাপাশি ফাইভজি ফোনের দাম বেশি। তাই আমরা মনে করি না যে ফাইভজি চালুর সাথে সাথে দেশের মানুষ ফাইভজিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যাদের সামর্থ্য আছে তারাই ফাইভজি ব্যবহার করতে পারবে সে সংখ্যাও তো বেশি না। সাধারন মানুষ এখনো বেশি টুজি ফোন ব্যবহার করে, সেটা তার পক্ষে কেনা সম্ভব। তবে করোনাকালে এটার অনেক উন্নতি হয়েছে, প্রচুর ফোরজি ফোন বিক্রি হয়েছে অনলাইন ক্লাসের জন্য।’’
    মন্ত্রীর মতে, দুনিয়ার সব খানেই ফাইভজিকে দেখা হয় ধনী মানুষদের জন্য এবং ফাইভজি মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শুরুতেই আইওআইটি এই প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে। তবে সে ক্ষেত্রে দেশের শিল্প বিকাশের স্বার্থের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
    এছাড়াও যারা মোবাইলেও এই প্রযুক্তি সেবা উপভোগ করতে চান তাদের জন্য দেশে ফাইভজি ফোন তৈরি হচ্ছে এবং এই ফোন আমদানিতেও কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানান ক্ষমতাসীন সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প’ বাস্তবায়নের এই সীপাহ সালার।
    ‘‘সরকারের প্রস্তুতি অনুযায়ী, দেশে ফাইভজি সেবা চালুতে কোনো বাধা নেই। অপারেটররা যে কোনো সময় ঢাকা কেন্দ্রিক এই সেবাটি চালু করতে পারেন। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা’’।