স্বর্ণের খবরে মাইক্রেবাসে লুট করতে চেয়েছিল চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে ডাকাতরা!

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাইক্রোবাসে স্বর্ণ থাকার খবরে তা লুট করতে চেয়েছিলেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান ও ইউপি মেম্বার কামরুজ্জানের নেতৃত্বে ডাকাত দল। কিন্তু ওই মাইক্রোবাসে স্বর্ণ নয়, ছিলো গাড়ির যন্ত্রাংশ ও লুব্রিকেন্ট। এমনই তথ্য জানিয়েছে যশোরের পুলিশ। অপরদিকে খুলনা খালিশপুরের বয়রা বকুলতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমানের একটি প্রাইভেটকার, দুটি চাকু ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। এলিয়ান ব্রান্ডের ওই প্রাইভেটকার ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হয়েছিলো বলে দাবি করা হচ্ছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) জাহাঙ্গীর আলম জানান, আটক ৪ ডাকাতের মধ্যে মিজানুর রহমান নড়াইলের নড়াগাতি থানার নয়নপুর গ্রামের মৃত মুক্তার হোসেনের ছেলে। তিনি পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন। অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকার কারণে ২০১৫ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন। ওই সময় মিজানুর রহমান বাঘারপাড়া থানায় কর্মরত ছিলেন। চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত দল তৈরি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে গিয়ে ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব পরিচয়ে তারা ডাকাতি এবং ছিনতাই করতেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, গত বৃহস্পতিবার ইকবাল হোসেন ও আশরাফুজ্জামান নামে দুই ব্যক্তি বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় যাচ্ছিলেন। এ খবরটি জানতে পারে ডাকাত দলটি। তবে ডাকাতদের কাছে খবর ছিলো, ওই গাড়িতে স্বর্ণ আছে। এই স্বর্ণ লুটের জন্য সকাল পৌনে ছয়টার দিকে মাইক্রোবাসটি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে ডাকাত দল একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার দিয়ে বেরিকেড সৃষ্টি করে আটকায়। রূপসার ফেরিঘাট থেকে তারা মাইক্রোবাসের পিছু নিয়েছিলেন। গুটুদিয়ায় বেরিকেড দেওয়ার পর অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মাইক্রোবাসের চালক ইকবাল হোসেন ও আরোহী আশরাফুজ্জানের হাত-পা বেঁধে ফেলেন তারা। পরে ভুক্তভোগীদেরকে তাদেরই মাইক্রোবাসে নিয়ে সকাল পৌনে নয়টার দিকে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সাইটখালিতে এনে ফেলে দেন ডাকাতরা। বিষয়টি জানতে পেরে সকাল ১০ টার দিকে বাঘারপাড়ার পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সুকদেবনগর থেকে ডাকাতদের আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকার মালামালসহ লুণ্ঠিত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। পরে এ ঘটনায় চালক ইকবাল হোসেন বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। ইকবাল হোসেন সাতক্ষীরার হাড়দাহ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বলেন, ইকবাল হোসেন তাদের জানিয়েছেন মাইক্রোবাসে কোনো স্বর্ণ ছিলো না।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, মামলাটি তারা তদন্ত করছেন। তারা আটক ডাকাতদের স্বীকারোক্তিতে পরে খুলনার খালিশপুরের বয়রা বকুলতলায় চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমানের চারতলা বাড়ির সামনে থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৩-১১৫৮), দুটি চাকু ও দুটি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করেন। এছাড়া জব্দকৃত প্রাইভেটকারের মধ্যে ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ডাকাতরা ইকবাল হোসেন ও আরিফুজ্জামানের কাছ থেকে এই ২০ হাজার টাকাসহ মোট ২৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়েছিলেন। তিনি জানান, ডাকাতরা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে মোট ৯ জন ছিলেন। আটক ৪ জন বাদে অন্যদের বাড়ি যশোর এলাকায় বলে জানতে পেরেছেন। তাদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটির সন্ধান করছেন তারা। তিনি আরো জানান, আটক ৪ জনকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ সময় তাদের মধ্যে দুজন দেলোয়ার হোসেন ও ইউপি মেম্বার কামরুজ্জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বাঘারপাড়ার পুলিশ ডাকাতির অভিযোগে ৪ জনকে আটক করে। এরা হলেন-নড়াইলের নড়াগাতি থানার নয়নপুর গ্রামের মৃত মুক্তার হোসেনের ছেলে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরার মাছখোনা গ্রামের জমাত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, যশোরের শার্শা উপজেলার সেতাই গ্রামের নাজির উদ্দিন শেখের ছেলে দেলোয়ার হোসেন ও একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে ইউপি মেম্বার কামরুজ্জামান।