শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রোডম্যাপটি কী?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে, নভেম্বরে পরীক্ষা। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। কিন্তু এই কাজের রোডম্যাপ পরিষ্কার নয়। প্রশ্ন উঠেছে করোনা সংক্রমণ যদি না কমে তাহলে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে মাসের পর মাস বন্ধ থাকবে? শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপুমনি বলেছেন, এবার আর অটোপাস নয়, পরীক্ষা হবে। আর সেই পরীক্ষা হতে পারে নভেম্বরে। আর সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে। তার আগে শিক্ষক-কর্মচারী ও ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, আমাদের পরিকল্পনা দুটি বিষয়কে মাথায় রেখে করা হয়েছে। যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে এক রকম। আর যদি করোনার মধ্যেই খুলতে হয় তাহলে আরেক রকম। তবে আমরা মনে করি সংক্রমণ পাঁচ ভাগের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে না। তিনি জানান, নভেম্বরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। এটা ক্লাস নেয়ার জন্য নয়, ওই পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে। সেটা সফল হলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। আর এর আগে শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্রদের (১৮ বছর বা তোর বেশি বয়সের) শতভাগ টিকার ব্যবস্থা করা হবে। তবে তারা বৃহস্পতিবার আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরীক্ষার্থীদের বয়স ১৮ বছরের নিচেও যদি হয় তারপরও সবাইকে যদি টিকা দেয়া যায় তাহলে তাও দেয়া হবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করছে। তবে এরই মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সব শিক্ষক এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৭৮ হাজার শিক্ষক, কর্মচারী টিকা নিয়েছেন বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। অধিদফতরের পরিচালক জানান, করোনার মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে ইউনিসেফের গাইডলাইন মেনে আমরা পরিকল্পনা করেছি। খোলার ১৫ দিন আগে থেকেই তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব, শিক্ষার্থীরা কত দূরে বসবেন, মাস্ক সব কিছুই নির্ধারণ করা আছে। আর শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিক কাজও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ স্পষ্ট নয়। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু পরীক্ষার কথাই চিন্তা করছে। কিন্তু তারা যদি না শিখে তাহলে পরীক্ষা নিয়ে কী হবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের দিকে করোনা কমে গিয়েছিলো তখন কিন্তু পরীক্ষা নেয়া যেত স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ক্লাস চালানো যেত পরিকল্পনা করে।
এখন তো করোনা অনেক বেশি। তাই আমি এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নই। কিন্তু প্রশ্ন হলো করোনা থাকলে কি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না? অটোপাস দিয়ে দেব? গত বছর যাদের অটোপাস দেয়া হলো তারা কি যা প্রয়োজন তা শিখেছে। মৌলিক বিষয়গুলো না শিখিয়ে অটোপাস দিয়ে তো কোনো লাভ নেই। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ। আমরা শুধু পরীক্ষা নিয়ে কথা শুনেছি কিন্তু পড়াশুনার কী হবে তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ বা পরিকল্পনা দেখিনি। না পড়িয়ে পরীক্ষা নিয়ে কী হবে? এই নিয়ে কোনো রোডম্যাপ বা টাইম লাইন আমদের নেই। তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু এটা করতে যে দক্ষতা বা জ্ঞান দরকার তার ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করি। তার মতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাধিক শিফট করে, দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস পরীক্ষা সবই নেয়া যেত। দরকার ছিলো পরিকল্পনা। কিন্তু তা হয়নি। অনলাইন বা মডিউল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এখানে অবকাঠামো নেই। অর্ধেক শিক্ষার্থীর ডিভাইস নেই। আর সরাসরি ক্লাস তো পুরোপুরি বাদ দেয়া সম্ভব নয়। এটার আলাদা গুরুত্ব আছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে