চীন থেকে আরো ৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনবে বাংলাদেশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চীনের সিনোফার্ম থেকে আরও ৬ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল বুধবার ২২তম অর্থনৈতিক সংক্রান্ত এবং ২৭তম সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে, অর্থমন্ত্রী ভ্যাকসিনের মূল্য প্রকাশ করেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে যে দামে কিনেছি, তার চেয়ে বাড়েনি। এই প্রাইজটি আমাদের কাছে নাই, কারণ বাকিগুলো এখনো নেগোসিয়েশন চলছে। প্রাইজ ফাইনারাইজড হরে আমরা বলতে পারব, প্রাইজ এখনো ফাইনালাইজড হয়নি, সে জন্য আমরা বলতে পারছি না। তিনি বলেন, মোট ১৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এতে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ডোজ লাগবে। এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৫৫ লাখ কিনেছি। সভায় আমরা ৬ কোটি ডোজ ক্রয়ের জন্য অনুমোদন দিলাম। বাকিটা আমরা পর্যায়ক্রমে অনব।
এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ক্রয়ের জন্য অনুমোদিত ভ্যাকসিন নভেম্বর আসতে পারে। মূল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, সিনোফার্মের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট রয়েছে। মূল্য প্রকাশ করা যাবে না। এর আগে, সিনোফার্ম থেকে ১ দশমিক ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনেছে সরকার। যার মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশ পেয়েছে। তবে, চীন থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৮১ লাখ ডোজ। যার মধ্যে ১১ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল বুধবার রাতে আরও ১৭ লাখ ৭০ হাজার ডোজ সিনোফার্মের টিকা ঢাকায় এসেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় গতকালই চীনের সিনোফার্ম থেকে ১৭ লাখ ভ্যাকসিন পেয়েছে বাংলাদেশ। কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ১৫ আগস্টের মধ্যে ৫৪ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, যার ৩০ লাখ বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় আসবে। বৈঠক শেষে অনলাইন ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রেমিট্যান্স কোনো জাদু নয়, তাই রেমিট্যান্স যে জায়গায় ছিল সে জায়গায়ই থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। রেমিট্যান্সের জাদু শেষ হয়ে আসছে বলে সিপিডির মন্তব্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রেমিট্যান্স কি জাদু নাকি? রেমিট্যান্স যদি জাদু হয় তবে জাদু শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু রেমিট্যান্স তো জাদু নয়। সুতরাং রেমিট্যান্স কখনো শেষ হবে না। রেমিট্যান্স যে জায়গায় ছিলে সে জায়গায়ই থাকবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে ২০১৯ সালে যখন আমরা রেমিট্যান্সের বিষয়ে প্রণোদনা দেয়া শুরু করি তখন থেকেই একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা বলে আসছিল প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাবে না এবং তারা বলেছে এটা কখনো বাড়বে না। তারা বলেছিল, এটা সাময়িক, সাসটেইনেবল নয়। এটা যে কোনো মুহ‚র্তে শেষ হয়ে যাবে। আপনারা জানেন, ২০১৯ সালে আমরা যখন প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছিলাম তার আগে আমাদের রেমিট্যান্স ছিল প্রতি বছর ১৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর প্রথম বছরই আমরা সংগ্রহ করলাম ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। ১৩ দশমিক ১ থেকে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে চলে যায়। দ্বিতীয় বছরে রেমিট্যান্স প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যায়। এটা অবিশ্বাস্য। রেমিট্যান্স ২৫ বিলিয়ন ডলার আসার পর তারা বলছে অনেক বেশি এসে গেছে। তারা চায় কম বেশি আসুক।
বিদেশগামীদের কতটা সহায়তা দেয়া হয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। সঠিকভাবে পাঠাতে পেরেছি। আমাদের কাছে এমন অভিযোগ নেই যে তারা যেতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা যেখানে তারা যাবে সেখানে তারা যাচ্ছে। সেটা বন্ধ হয়নি, এটি চলমান। যখন স্বাভাবিক হবে তখন আরও বেশি মানুষ যাবে। আমার বিষয়টি হলো রেমিট্যান্সের সমস্যা ছিল সেটি ভালো হচ্ছে। বিদেশে যাওয়া নিয়ে বিশেষ ব্যয় করা হয়েছে, সব শর্তে ঋণের ব্যবস্থা আছে। তাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই আছে। তিনি বলেন, এ মাসের প্রথম ৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৬৭ মিলিয়ন ডলার। একই সময় গত বছর ৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। এর পরও এটা সুবাতাস দেবে না এটা তারা কেন বলেন, দেশকে ভালোবাসা, জনগোষ্ঠীর ভালোর বিষয়গুলো ভাবা প্রয়োজন। এক মাসে কম ছিল, বাকি মাসগুলোতে সেটি পূরণ হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের দল ৪-১ এ সিরিজ জিতল, চারটা জিতলাম একটা জিততে পারিনি। তারা বলে বেড়াচ্ছেন বা বলতে চাইবেন, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেছে। সিরিজ জিতেছি সেটা বলবে না।
জিডিপি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা যদি দেখি ব্যাহত হচ্ছে বা ইনফেকটেড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেক্ষেত্রে সেটি দেখা হবে। এ মুহ‚র্তে আমাদের জিডিপির যে অবস্থা তাতে আমরা এটি কাভার করতে পারব বলে আশা করি। জিডিপিতে আমরা ২০১৯-২০ অথবছরে যে অর্জন করেছি ৩ দশমিক ৫১, এটা আমাদের আশা ছিল আমরা অর্জন করতে পারব। আপনারা জানেন সেই বছরে একটা বড় অংশ আমরা অস্বাভাবিকভাবে পার করেছি এবং শুধু আমরা না অন্যান্য দেশও সেভাবে পার করেছে। তারপর আমরা ৩ দশমিক ৫১ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি, এটাও এশিয়ার সব দেশের ওপরে আমাদের অবস্থান। সভায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ডিজিটাল ক্লাসরুম কনটেন্ট’ কেনার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বৈঠক শেষে বিকেলে অনলাইন ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এদিন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে দুটি প্রস্তাব পাস হয়। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পাস হয় নয়টি প্রস্তাব। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে শিখন দক্ষতার ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের অনলাইন/ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে একটি উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেজন্য সরকারি মালিকানাধীন কম্পিউটার কাউন্সিলের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল ক্লাসরুম কনটেন্ট ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েছে। এসব কনটেন্ট তাদের পড়াশোনার বিষয় সহায়তা করবে। এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত রোগীর জীবন রক্ষার্থে দ্রæততম সময়ে পিসিআর টেস্ট কিট, অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট, পিসিআর ল্যাব সরঞ্জাম, সিপিএপি, বিআইপিএপি মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল জরুরি ভিত্তিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। ক্রয় কমিটির বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (১ম ও ২য় শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৭৬ লাখ ৪২ হাজার ৭১টি বই (১) কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স (৭টি লট), (২) মা সিস্টেম কম্পিউটার্স প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজিং (৯টি লট), (৩) কৃষ্ণা ট্রেডার্স (২টি লট) এবং (৪) বারতোপা প্রিন্টার্স লিমিটেড (৮টি লট)-এর কাছ থেকে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩০০ টাকায় মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।