গণটিকা কর্মসূচি শুরু

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কোভিড মহামারী দমনের লক্ষ্যে শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচিতে জেলায় জেলায় মানুষ টিকা নিয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় সারাদেশে ১৫ হাজারের বেশি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে সরকার। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে সমন্বয়হীনতা ছিল প্রকট। খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহে এ সংকট ছিল বেশি।  এই কর্মসূচি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলবে ৯ অগাস্ট পর্যন্ত। প্রথম দিন বাদ পড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হবে ৮ ও ৯ অগাস্ট। আর ১০ থেকে ১২ অগাস্ট ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে টিকা কর্মসূচি চলবে।
মো. জামাল হোসেন,খুলনা থেকে জানান, খুলনা মহানগরী ও জেলার কেন্দ্রগুলোতে গণটিকা প্রদান ফুরিয়ে যায় মাত্র তিন ঘন্টায়। শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় টিকা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করেও টিকা না পেয়ে অনেককেই বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। অপরদিকে, টিকা কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বালাই। সামাজিক দূরত্বেরও কোনো ছিটেফোঁটা চিত্র চোখে পড়েনি। এ কারণে অনেক কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শনিবার সকাল থেকে নগরীর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। হালকা বৃষ্টির মধ্যে করোনা নির্মূলের মানসিকতা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী, মা-মেয়ে দল বেধে কেন্দ্রে হাজির হন। কোথাও কোথাও দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বেলা ১২ টার মধ্যে খবর আসে টিকা ফুরিয়ে গেছে। কেন্দ্রে এসে বিফল মনোরথে ফিরতে হয় অধিকাংশকে। বৃহস্পতিবার নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে কেসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, শনিবার থেকে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা দেওয়া হবে।
নগর স্বাস্থ্য ভবনে সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ লাইন পড়ে। টিকা প্রত্যাশীদের হইচই। পুলিশ বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পারছে না। লাইনে অপেক্ষার সংখ্যা প্রায় ২শ। টিকা না পেয়ে নগরভবন থেকে বাড়ি ফিরেছেন হাওয়া বেগম, নাজমা খাতুন, রাশিদা বেগম, নাসরিন খাতুন ও তাদের কর্তারা।
২৩ নং ওয়ার্ডের অধিবাসী প্রশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী শর্মী বিশ্বাস, শিবপদ বিশ্বাসের স্ত্রী সাধনা বিশ্বাস, শেখ মুনসুর রহমানের স্ত্রী সোনালী পারভীন, নিখিল সরকারের স্ত্রী কৃষ্ণা রানী সরকার, প্রশান্ত সরকারের পুত্র উত্তম সরকারসহ শতাধিক মানুষ সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন গোলকমনি শিশুপার্ক কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে ২শ নারী পুরুষকে টিকা দেওয়ার পর বেলা ১২ টা নাগাদ খবর আসে টিকা শেষ।
সবুরননেছা কেন্দ্রে ১২টার মধ্যে ২শ নারী পুরুষ টিকা গ্রহণ করেন। অপেক্ষমান ছিলেন আরও ৫০ নারী-পুরুষ। তবে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের ফিরিয়ে দেন।
খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২শ নারী-পুরুষ টিকা নিয়েছেন। বেলা পৌনে ১টা নাগাদ কর্মসূচি শেষ হয়। বাবু খান রোড, হাজী মহসীন রোড ও খানজাহান আলী রোডের শতাধিক মানুষ এ কেন্দ্র থেকে ফিরে যান।
এদিকে, মিউনিসিপ্যালিটি ট্যাংক রোডের ২৯ নং ওয়ার্ড থেকে একই ওয়ার্ডের মিন্টু সরদার ও হাফিজুল হক টিকা পেয়ে খুব খুশি হন। দ্বিতীয় ডোজ সম্পর্কে তাদের কার্ডে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ টিকাদানকারীদের মধ্যে সন্দেহ, নির্দিষ্ট তারিখে দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়া যাবে কিনা।
টিকা কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ :
নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে কিছু অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেছেন টিকা গ্রহীতারা। স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগও রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল ৯ টা থেকে কেন্দ্রগুলোতে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডে তিনটি কেন্দ্র পূর্ব বানিয়াখামার জনকল্যাণ সমিতি, ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় ও সাতরাস্তা মোড় সূর্যের হাসি ক্লিনিক। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার কারণে ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দা জনকল্যাণ সমিতির কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে থাকে। লকডাউনের কারণে ফটোস্ট্যাটের দোকান বন্ধ থাকায় অনেকে আইডি কার্ড ফটোকপি করতে পারেনি। ফলে টিকা না দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তারা। প্রথমদিনে প্রতিবন্ধী ও পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক মানুষের টিকা দেওয়ার কথা বললেও সেখানে তা ঠিকমতো অনুসরণ করা হচ্ছে না। অনেকের অভিযোগ টিকা কেন্দ্রে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের পরিচিত মানুষদের আগে টিকা দিচ্ছেন।
টিকা নিতে আসা আব্দুল গফ্ফার জানান, ‘সকালে টিকা কেন্দ্রে এসেছি। জানতে পারলাম যে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। পঞ্চাশের নিচের বয়সের লোকজন টিকা নিচ্ছে, কিন্তু আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকদের তেমন আগ্রহ নেই। একে অপরের গা ঘেঁষে রয়েছেন। ”
অপরদিকে টিকা গ্রহীতা নিজাম শেখ জানান, অদক্ষ কর্মী দিয়ে এখানে টিকা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অধিকাংশই উদাসীন। এখান থেকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।”
পূর্ব বানিয়াখামার জনকল্যাণ সমিতি কেন্দ্রে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক জিহাদুর রহমান জিহাদ জানান, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষ টিকা নিতে আসছে। এখানে দুজন দক্ষ টিকাদানকারী জনগণকে টিকা দিবেন। সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে টিকা গ্রহীতার সংখ্যাও বাড়ছে। জনবলের অভাবে তারা সামাজিক দূরত্ব ঠিকমতো বজায় রাখতে পারছেন না। যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে টিকা দিয়ে কোন লাভ হবে না।
এদিকে, তিন ঘন্টার মধ্যে সকল কেন্দ্রের টিকা ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার স্বপন কুমার হালদার বলেন, নগর স্বাস্থ্য ভবনে ৪৫ হাজার ২শ’ ডোজ মডার্নার টিকা মজুদ আছে। যা পরবর্তী ১৪ আগস্ট দেয়া হবে। তবে, টিকা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, টিকা না নিয়ে কেউ ফিরে গেছেন কি-না তা তার জানা নেই। তবে, এটি পরীক্ষামূলক হওয়ায় কিছু ত্রুটি হতে পারে। যা পরবর্তী তারিখে ঠিক করা হবে।
স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় টিকাদান কার্যক্রমের প্রথম দিনেই ইউনিয়নে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। গ্রামের মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে শনিবার দেশব্যাপী শুরু হয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। উপজেলার ইউনিয়নে নির্ধারিত একটি করে স্থান ও পৌরসভায় হাসপাতালে কার্যক্রম চালু করা হয়।
বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের সলুয়া স্কুলমাঠে কার্যক্রম চলমান অবস্থায় লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। সেখানে দায়িত্বরত রেজাউল ইসলাম নামের এক গ্রাম পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেন টিকা গ্রহীতারা। সকাল ১০ টার দিকে স্বরুপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের দেয়া স্লিপে সাধারণ মানুষকে টিকা কেন্দ্রে পাঠানো নিয়ে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। সাড়ে ১০ টার দিকে নারায়ণপুর হাইস্কুল কেন্দ্রে দেখা যায় টিকা নিতে আসা নারী পুরুষের লম্বা লাইন। ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ড থেকে ৬শ ব্যক্তি যাদের বয়স ৫০ এর ওপরে এমন লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মনোনীত করার কথা থাকলেও এখানে হয়েছে ভিন্ন। ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ড থেকেই মানুষ আনা হয়েছে কেন্দ্রে, আছে ২০/২৫ বছরের অনেক নারী পুরুষ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এখান থেকে ৫০ এর নিচে বয়সের লোকজনকে পরে টিকা নিতে বলেন।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এনামুল হক বলেন, কিছু এলাকাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ত্রুটির কারণে বিশৃঙ্খলা হলেও পরে তা ঠিক হয়ে যায়। সব মিলিয়ে কার্যক্রম শািন্তপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, কেশবপুর (যশোর) ॥ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ৫ হাজার ৪শ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়েছে ।
কেশবপুরে ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে করোনা টিকা কেন্দ্র করা হয়েছে।(ত্রমোহনী ইউনিয়ন ও সাতবাড়িয়া মিলে ১ টা কেন্দ্র , বিদ্যানন্দকাঠী ও হাসানপুর ইউনিয়ন মিলে ১ টা কেন্দ্র এয়াড়া বাকি ৭টি ইউনিয়নে টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ৩টি বুথ ছিলো। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন ,৯টি কেন্দ্র করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে তিনটা বুথ থাকবে। এর মধ্যে নারীদের জন্য একটি ও পুরুষদের জন্য ২টি বুথ। প্রতিটি বুথে ২শ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ॥ রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা বেশি এবং টিকার সরবরাহ কম এমন পরিস্থিতি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে শনিবার গণটিকা কার্যক্রমে গণহয়রানির সৃষ্টি হয়। প্রথম দিনেই মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে নাজেহাল হয়। টিকা রেজিস্ট্রেশন করার সময় ভুল তথ্যের কারণে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে এসে ভোগান্তিতে পড়েন। তারা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ কিছুক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন জানান, টিকা রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুল করে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস উল্লেখ করা হয়। সকালে তিনি টিকা গ্রহণের জন্য হলিধানী ইউনিয়ন টিকাদান কেন্দ্র ছেড়ে চলে আসেন শহরে। কিন্তু কোথাও তিনি টিকা পাননি। ইউনিয়নে গেলেও কেন্দ্র দেখে তাকে আবার ঝিনাইদহে আসতে বলা হয়। এভাবে লোকমান হোসেন হয়রানির শিকার হন। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার মুরারীদহ গ্রামের আবুল হাসেম জানান, তার রেজিস্ট্র্রেশন কার্ডে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিস উল্লেখ করা হয়। সদর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দফতর থেকে তাকে পাঠানো হয় সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে আবারো তাকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দফতরে পাঠানো হয়। এভাবে তিনি রিক্সাভাড়া দিয়ে কয়েকবার যাতায়াত করে হয়রানির শিকার হয়ে জানতে পারেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিসে কোনো টিকা দান কেন্দ্র নেই। এমনভাবে রেজিস্ট্রেশনে কেন্দ্র সঠিক ভাবে উল্লেখ না থাকায় শত শত নারী পুরুষকে হয়রানি হতে হয়। ইউনিয়ন ও শহরের সবখানে একই চিত্র ছিল।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গ্রামও শহরের হাজার হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। প্রথম দিনে প্রতিটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয় ৬শ জনের, ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ রেজিস্ট্র্রেশন করেও টিকা নিতে পারেনি।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মান্দিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শমসের মন্ডল ও কালাপাড়িয়া গ্রামের শেফালী বেগম শুধুমাত্র ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে আসেন টিকা নিতে। কিন্তু তাদের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় গণটিকার আওতায় টিকা দেওয়া হয়নি। শৈলকূপার মির্জাপুর ইউনিয়নেও অনেক মানুষকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নে টিকা নিয়ে তর্কবিতর্ক হতে দেখা গেছে। প্রায় সব কেন্দ্রেই একই অবস্থা বিরাজমান।
সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছিল, কিন্তু টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ৭শ জনকে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ডা. শামীম কবীর বলেন, রেজিস্ট্রেশন বেশি কিন্তু টিকার সরবরাহ কম হওয়ায় প্রথম দিনে একটু ভিড় হয়েছে। তিনি বলেন, আমার অফিসে কোন টিকাদান কেন্দ্র নেই অথচ রেজিস্ট্র্রেশনে কেন্দ্র উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।
জেলার সিভিল সার্জনের দফতর থেকে বলা হয়েছে, শনিবার জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভায় ৭৩টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব কেন্দ্রে ৬শ জন করে সর্বমোট ৪৩ হাজার ৮শ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময় থাকলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে দুপুরের আগেই টিকা শেষ হয়ে যায়।

মহেশপুর(ঝিনাইদহ)সংবাদদাতা ॥ সকালে মহেশপুর উপজেলার এসবিকে টিকাদান কেন্দ্রে গণটিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্বাশতী শীলের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামীদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর সুলতানুজ্জামান লিটন, এসবিকে ইউপি চেয়ারম্যান আরিফান হাসান চৌধুরী লুথান প্রমুখ।
অন্যদিকে মহেশপুর পৌরসভার টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, এই উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ মোট ১৩টি কেন্দ্রে ৩৮টি বুথে ৭হাজার ৪শ জনকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা ॥ তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে পরিষদে শনিবার বয়স্ক ব্যক্তি, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের টিকা দেওয়া হয়। গণটিকাদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তানজিল্লুর রহমান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিফ-উল-হাসান, তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সরদার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিফ-উল-হাসান জানান, দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তালা উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ২০০ জনকে প্রাথমিকভাবে মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে ।
ডুমুরিয়া (খুলনা) সংবাদদাতা॥ খুলনার ডুমুরিয়াতে গণ টিকা কার্যক্রমের আওতায় ৮ হাজার ৪শ জনকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল ৯টা থেকে একযোগে সকল ইউনিয়নে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতি ইউনিয়নে ৩টি ওয়ার্ডে ২শ জন করে ৬শ জনকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এ হিসেবে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ৮ হাজার ৪শ জনকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুফিয়ান রুস্তম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আগামী ১৪ আগস্ট দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৮ হাজার ৪শ জনকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট অফিস ॥ বাগেরহাটে ৭৮টি কেন্দ্রে টিকদান কর্মসূচি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ও মোংলা পৌরসভায় করোনা ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। এজন্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চলে। ২৫ বছর বয়সী যে কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসলে টিকা গ্রহণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির বলেন, জেলার ৭৮টি কেন্দ্রে আমরা ৪৫ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন প্রদান করব। তবে যদি কোন কেন্দ্রে নির্ধারিত লক্ষমাত্রার থেকে বেশি টিকা গ্রহীতা আসেন, তাদেরকেও দেওয়ার জন্য আমাদের টিকার মজুদ রয়েছে। এজন্য ৪৫ হাজার টিকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমরা ৬০ হাজার ৮০০ সিনোফার্মার টিকার মজুদ রেখেছি।

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) সংবাদদাতা ॥ সারাদেশের মতো মোরেলগঞ্জেও শনিবার থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় চলছে এই টিকাদানকার্যক্রম। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি জানান, টিকা ক্যাম্পেইনের আওতায় আপাতত একদিন (৭ আগস্ট) পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সাতদিন বন্ধ থাকার পর আবার ১৪ আগস্ট থেকে মূল ক্যাম্পেইন চালু হয়ে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত একটানা চলবে। উপজেলার ৫১টি বুথের প্রতিটিতে দৈনিক ২শ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম ও পৌরসভার মেয়র এস এম মনিরুল হক তালুকদার টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : সকাল ১০টায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে প্রভাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভ্যাকসিন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন এ.এস.এম.মারুফ হাসান, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, জেলা পরিবার-পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক দিপক কুমার সাহা, বিএমএ সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চেীধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা।
জেলার ৪টি উপজেলায় ৭১টি কেন্দ্রে ১২৫টি বুথে ২৯ হাজার ৫শ মানুষকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে।