গণটিকা নিতে টোকেন ভোগান্তি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মাকে নিয়ে সকাল ৯টায় টিকাদান কেন্দ্রে গেলাম। সেখানে গিয়ে শুনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে টোকেন আনতে হবে। টোকেন দেখালেই কেবল মিলবে টিকা। অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত টিকা না নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে আমাদের। ক্ষোভ নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ষোলশহর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা। শনিবার (৭ আগস্ট) সকালে তিনি তার বৃদ্ধ মাকে নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে টিকা দিতে নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবক বলেন, মায়ের টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। ১৫/১৬দিন হয়ে যাওয়ার পরও এখনও এসএমএস আসেনি। পরে আজ গণটিকার প্রথম দিন মাকে রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিয়ে যাই। সেখানে সুরক্ষা অ্যাপের নিবন্ধন ফরম দেখানোর পরও আমার মাকে টিকা দেওয়া হয়নি। শুধু আমার মা নয়, এভাবে অনেক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ড কমিশনার গণটিকা নেওয়ার জন্য উনার ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন। তার ওই পোস্টের কোথাও এই টোকেন নেওয়ার কথা বলেননি। তাহলে এত মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার মানে কি? শুধু ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র নয়, নগরীর অন্যান্য ওয়ার্ডেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
সকালে সুরক্ষা অ্যাপের নিবন্ধন ফরম নিয়ে ঈদগাঁ মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা দিতে যান বরফকল এলাকার বাসিন্দা অরুনা আক্তার। ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে গেলে ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে সবাই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। কিন্তু আমি সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার পর ওই ফরম নিয়ে যাওয়ার পরও আমাকে টিকা দেওয়া হয়নি। টিকাদান কেন্দ্র থেকে বলা হয়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে টোকেন নিয়ে আসতে, তাহলেই কেবল ভ্যাকসিন নিতে পারবো। এদিকে টোকেন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। নগরীর একাধিক ওয়ার্ডে ভ্যাকসিন নিতে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পরিচিত, তাদের টোকেন দেওয়া হয়েছে। অন্যরা এই টোকেন পাননি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় গণটিকায় ২৫ বছরের কম বয়সীরা টিকা পাবে না বলা হলেও বাস্তবে দেখা গেছে, কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে টোকেন নিয়ে ২৫ বছরের কম বয়সীরাও টিকা দিয়েছেন।
ঈদগাঁ মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৫ বছরের কম বয়সী এক তরুণী টিকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমার মামা ছাত্রলীগ করেন, কাউন্সিলরের সঙ্গে ভালো সর্ম্পক, সেভাবেই ম্যানেজ করেছি।’ সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা বলেন, দেশের নাগরিক হয়ে নিজের প্রাপ্যটা আমরা কতটুকু পাচ্ছি বলতে পারেন? সরকারের দেওয়া ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রেও কেন স্বজনপ্রীতির স্বীকার হতে হবে জনপ্রতিনিধিদের হাতে? শেখ হাসিনা ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছেন, সেখানেতো নেত্রী বলেন নাই, যে জনপ্রতিনিধিদের স্বজনদের এই টিকা দিতে পারবে। তাহলে কেন ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুর আগের দিন রাতে জনপ্রতিনিধিরা তাদের স্বজনদের টোকেন দিয়ে আসছেন। যদি জনপ্রতিনিধিদের স্বজনরাই একমাত্র পাওয়ার যোগ্য, তাহলে সেটা আগে থেকে বলে দিতে পারতেন। অহেতুক সাধারণ মানুষকে ডেকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে কষ্ট দেওয়ার তো কোনও মানে নেই। তবে টোকেন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেক। এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াত-বিএনপি আমার বিরুদ্ধে অপ্রপচার চালাচ্ছে। আমি কোনও টোকেন দেইনি। আপনার ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে দেওয়া টোকেন কাছে আছে বলার পর আবদুর বারেক বলেন, আমরা দেড়শ’ স্বেচ্ছাসেবক দিয়েছিলাম। ওদেরকে টোকেন দিয়েছি। তিন জনের পক্ষে ভ্যাকসিন গ্রহিতাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তাই প্রতিটি কেন্দ্রে ৫০ জন করে দেড়শ’ জন স্বেচ্ছাসেবক দিয়েছিলাম। তাদেরকে টোকেন দিয়েছি।
এ বিষয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বলেন, ‘টোকেন দিয়েছি, এটা শতভাগ সত্য। টিকাকেন্দ্রে যাতে মানুষের ভিড় না হয়, সেজন্য আমরা ২০০ জনকে টোকেন দিয়েছি। আর ১০০ ডোজ আমরা যারা কেন্দ্রে আসবে তাদের থেকে যারা বয়স্ক তাদেরকে দেওয়ার জন্য রেখেছিলাম। টোকেন আমি আমার পরিবারের কাউকে দিইনি। যাদের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে, বয়স্ক শুধু তাদেরকেই টোকেন দেওয়া হয়েছে। এ সর্ম্পকে জানতে ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কাউন্সিলরদের টোকেন দেওয়ার জন্য বলা হয়নি। আমরা বলেছি, যারা বয়স্ক তাদের অগ্রাধিকার দিতে। কাউন্সিলররা কেন টোকেন দিয়েছেন এ বিষয়ে তারা ভালো জানেন।