অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণে রফতানি প্রায় ৪-৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কম হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শনিবার (৭ আগস্ট) এক ওয়েবিনারে এ সব কথা বলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, মহামারি কারণে দেশের জিপিডি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার ৩৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৩৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। এ সময় দারিদ্রের হার ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন প্রায় ২ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মানুষ। মহামারির নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি গত ৬ মাসে মোটামুটি সঠিক পথেই পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৬ ও ২০৪১ সালের প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের সরকারি-বেসারকারিখাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের আমাদের রফতানি প্রায় ৪-৬ বিলিয়ন ডলার কম হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানোর পাশাপাশি করের হার বৃদ্ধি করতে হলে, দেশের শুল্ক ও ভ্যাট আহরণ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন খুবই জরুরি। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার সূচকে উন্নয়ন, স্থানীয় বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্যবিরোধ নিষ্পত্তিতে এডিআর ব্যবস্থার ব্যবহার বাড়াতে হবে। আমাদের পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য। একইসঙ্গে রফতানির বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ও রফতানি উন্নয়ন ফাণ্ডের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার সহজ এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুততর সহিত পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়টি ভাবতে হবে।
করোনার কারণে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান। তিনি বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা সহায়তা পাওয়া নিশ্চিতকরণ, সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে ঋণ দেয়ার সময়সীমা অন্তত ৩ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন বলেন, দারিদ্র বিমোচনসহ অর্থনীতির অন্যান্য খাতে আপডেটেড তথ্যের অপার্যপ্ততার কারণে নীতিমালা প্রণয়নে প্রতিবন্ধকতা সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মহামারি মোকাবিলায় লকডাউনের ফলে সমাজের অনেক মানুষ নতুন দারিদ্র সীমায় চলে আসতে পারে, তা মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে প্রণোদনা প্যাকেজ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিকট কী করে পৌঁছানো যায় তার প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিনায়েক সেন বলেন, কৃষিখাত, ম্যানুফেকচারিং এবং সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে উন্নীত করেছে। তবে এলডিসি পরবর্তী সময়ের জন্য দেশের কর ও শুল্ক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানো এবং ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা প্রভৃতি বিষয়সমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ আমাদের রফতানির জন্য একটি বড় হুমকি, তবে অতীতে অন্যান্য দেশগুলো বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, রফতানির বহুমুখীকরণ এবং এফটিএ ও অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করেছে, তবে এজন্য সরকারকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং এলডিসি গ্রাজুয়েশন মোকাবিলায় আগামী ২-৪ বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এজন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। লিকুইডেটে ম্যানেজমেন্ট-এর ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের বেশি প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের আরও অধিক হারে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে নজর দিতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।