যশোর শহরে যানজট-জনজট

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহর যেন যানজট আর জনজটের নগরে পরিণত হয় গতকাল। প্রায় প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। তবে গতকাল মঙ্গলবার যশোরে কঠোর লকডাউন যেন উধাও হয়ে যায়। কড়াকড়ি না থাকায়, শহরে ও সড়কে বেড়ে যায় মানুষের অপ্রয়োজনীয় চলাচল। এতে কোথাও কোথাও দেখা দেয় যানজট। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, কয়েক দিনের কঠোরতায় অপ্রয়োজনের মানুষের চলাচল কিছুটা কমলেও গতকাল শহরে মানুষের চাপ ছিলো একটু বেশি। এ পরিস্থিতি দুপুর ১ টা পর্যন্ত চললেও পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউন ও বিধিনিষেধ চলাকালে যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট রয়েছে। লকডাউন শুরুর পর থেকে এসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অনেকটা চোখে পড়ার মতো ছিলো। তবে গতকাল নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে মানুষ শহরে নেমে আসে যে যার মতো। মঙ্গলবার সকাল থেকে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের যানবাহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল-ইজিবাইক ও রিকসার ভিড়ে রীতিমত যানজট পরিস্থিতি দেখা গোটা শহরে বিভিন্ন জায়গায়। শহরের মনিহার এলাকা, চৌরাস্তা মোড়, এইচএমএম রোড, এমএম আলী রোড, মাইকপট্টি, মুজিব সড়ক এলাকায় যানবাহন ও মানুষের ভিড় দেখে যেন মনে হচ্ছিলো লকডাউনের দীর্ঘ নিরবতা ভেঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে সবাই। হঠাৎ যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সড়কের মোড়ে মোড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শহরবাসী।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বেশ বেগ পেতে হয়। অন্যান্য দিন লকডাউন চলাকালে বিনাকারণে বাইরে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হতেও হলেও গতকাল যশোর শহরের কোথাও এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। পরিস্থিতি দেখে অনেকেই মন্তব্য করতে থাকেন হয়তো লকডাউন উঠে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে মানুষের অপ্রয়োজনীয় চলাচল নিয়ন্ত্রণে আমাদের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। লকডাউন ভেঙ্গে বা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যারা বাইরে বের হচ্ছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরপরও একশ্রেণির মানুষ সচেতন হচ্ছে না। তারা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাইরে বের হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, সামনে যে কয়দিন কঠোর লকডাউন চলবে সে কয়দিন আমরা আরও কঠোর অবস্থানে থাকবো। আইন ভেঙে যারা অকারণে বাইরে আসবে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার যশোরে করোনা ও উপসর্গে আরও আটজন মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনায় সাতজন ও উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১৬৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রেহেনেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে ৫৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৬ জন, জিন এক্সপার্ট মেশিনে সাতজনের নমুনা পরীক্ষায় দুইজন ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ২০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২৩ জন। এর মধ্যে করোনার রেড জোনে ৯১ জন ও ইয়েলো জোনে ৩২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৬১। জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ১৪৪ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ১০২ জন।