চৌগাছায় আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগে ভাগেই বোরো চাষ শুরু

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছার কৃষকরা রবি মৌসুমে বোরো ধান রোপনে বেশ আগে ভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন। মৃদু শীতে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষক মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছর অসময়ের বৃষ্টিতে আমন ধানের অপুরোনীয় ক্ষতি হয়ে যায়। আমনের সেই ক্ষতি পুশিয়ে নিতেই চাষিরা আগাম ধান রোপনে ব্যস্ত। তবে সারসহ কৃষি উপকরনের লাগামহীন দামের কাছে চাষিরা যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন। বোরো মৌসুমে সার, কীটনাশক সহ সকল কৃষি উপকরনের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
মাঠের একটি ফসল নিয়ে কৃষকের হাজারও স্বপ্ন, সেই ফসল প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা অন্য যে কারনেই হোক যদি নষ্ট হয়ে যায়, তখন কৃষকের স্বপ্ন যেন নিমিশে শেষ, পড়ে যান মহাবিপাকে। চলতি বছরের আমন মৌসুমে মাঠে কেটে রাখা আমন ধান ডুবে যায় হাটু পানিতে। নষ্ট হয় ধান ও বিচেলি, ধার দেনা করে চাষ করা আমন ধান অনেক কৃষক মাঠেই ফেলে রেখে আসতে বাধ্য হন। তাই আমনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আকাশসম স্বপ্ন নিয়ে এ অঞ্চলের চাষিরা বেশ আগে ভাগেই চাষ শুরু করেছেন বোরো ধানের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মতই চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপানের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার অধিকাংশ মাঠেই বোরো ধানের চাষ হয়। চলতি বছরের অসমের বৃষ্টিতে অনেক জমির উঠতে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ওই সকল জমিতেও বোরো চাষ হবে, তাই লক্ষামাত্র ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গতকাল উপজেলার টেংগুরপুর, হাজরাখানা, পেটভরা, আন্দারকোটা, খড়িঞ্চা, চাঁদপাড়াসহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা মৌসুম শুরুর বেশ আগেই বোরো ধান রোপনে মাঠে নেমে পড়েছেন। ইতোমধ্যে চাষযোগ্য জমিতে জৈব সার ফেলে চাষ করে প্রস্তুত করা হয়েছে। অনেক জমিতে স্যালো বা মটরের পানি দিয়ে চাষ শুরু করা হয়েছে, আবার অনেকেই রোপন কাজও শুরু করেছেন। টেংগুরপুর বয়শাগাড়ি খালের মাঠে বোরো ধান রোপনে ব্যস্ত কৃষক ছমির হোসেন খাঁন, হাফিজুর রহমান, আয়ুব হোসেন, আসাদুল ইসলাম ,নূর হোসেন জানান, যে জমিতে তারা বোরো ধান রোপন করছেন এই জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে যেয়ে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। ধান কোন রকমে রক্ষা করা সম্ভব হলেও বিচেলি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আমন ধানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মূলত কিছুটা আগে ধান রোপন শুরু করা হয়েছে। ওই মাঠে কৃষক জিন্নাত আলী খাঁ ১ বিঘা, মফিজুর রহমান ১ বিঘা, ওমর আলী দেড় বিঘা, গোলাম মোস্তফা ৫ বিঘা, সামাউল খাঁন ১ বিঘা, আল আমিন ৭ বিঘা, সানাউল্লাহ ২ বিঘা, সালাম শেখ ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করছেন।
কৃষকরা জানান, বোরো ধান হচ্ছে একটি ব্যয় বহুল ফসল। কেননা ১ বিঘা জমিতে ধান রোপন থেকে শুরু করে কৃষকের ঘরে আসা পর্যন্ত ১৫/১৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর যদি সারসহ কৃষি উপকরনের দাম বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ব্যয়ও বেড়ে যায়। এবছর ১ বিঘা (৩৩ শতাক) জমিতে ধান রোপনের জন্য নেয়া হচ্ছে ১৪শ টাকা। বিঘা প্রতি পানির দাম এলাকা বিশেষ ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। এছাড়া সার, কীটনাশক, জোন খরচসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। চলতি বোরো মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা রড মিনিকেট, বিআর-২৮, বাসমতি, সুভললতা, তেজগোল্ড ও সুপার মিনিকেট ধানের চাষ বেশি করছেন। তবে রড মিনিকেট ধানের চাষ তুলনা মূলক বেশি হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
চাষিরা বলেন, অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে বোরো ধার উৎপাদনে কৃষককে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে কৃষকের ধান যখন বাড়িতে আসতে শুরু করে ঠিক সেই সময়ে ধানের বাজারদর কমে যায়। চলতি বছরের বোরো ধানের বাজার দর ভাল রাখার পাশাপাশি কৃষি উপকরনের দাম কমতে সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বোরো চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, কিছু কিছু এলাকার চাষিরা মৌসুম শুরুর আগেই ধান রোপন শুরু করেছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে বোরো চাষ লক্ষমাত্রা অতিক্রম করবে। কৃষি অফিস বোরো চাষিদের সব ধরনের সহযোগী প্রদান করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।