চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের বেশি আবাদ,সঙ্কট পানি ও জাগ দেয়ার জায়গা

0

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা ॥ চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। তবে পানি ও পাট জাগ দেয়ার জায়গা সঙ্কটের কারণে চাষিরা জমি থেকে পাট কাটতে পারছেন না। আবার পাট কেটে অনেক চাষিকে আঁটি প্রতি ৬ টাকা ব্যয় করে অন্যের জায়গায় পাট জাগ দিতে হচ্ছে। চাষিদের অল্প ব্যয়ে রিবন রেটিং পদ্বতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর পাটের দাম ভাল পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার ৭৯৭ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছে চাষিরা। গত মৌসুমে চাষিরা পাটের আবাদ করেছিলেন ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে। আর এবার আবাদ করেছেন ২০ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ২৪৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৫৩৫ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১ হাজার ৬৯৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ ও ফলন ভাল হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ৩ দশমিক ৫ মেট্টিক টন। প্রতি হেক্টরে ১৩ দশমিক ৫ বেল পাট উৎপন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পাট ভাল হয়েছে। বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৩ মণ পাটের ফলন হবে। তবে এলাকায় পাট জাগ দেয়ার পানি ও জায়গা সঙ্কট দেখা দেয়ায় তাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জাগ দেয়ার পানি ও জায়গা সঙ্কটের কারণে তিনি জমির পাট কাটা শুরু করেননি। গত বছর পানি সঙ্কট ছিলো না। তাছাড়া এ বছর পাটের বাজার ভাল না। বর্তমানে ১ হাজার ৬শ’ থেকে ১ হাজার ৯শ’ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজহাদ গ্রামের তরিকুর রহমান মল্লিক বলেন, তার ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টি হলে পাট জাগ দেয়ার কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এবছর বৃষ্টিপাত হয়েছে খুবই কম। কোথাও পানি নেই। এ অবস্থায় পাট কাটার সময় হলেও, পাট জাগ দেয়ার অসুবিধার কথা ভেবে পাট কাটতে পারছেন না। এছাড়া গ্রামে পাট পচানো খুবই সমস্যা। গ্রামের গর্ত যা ছিল তা মাটি ভরাট করার কারণে পাট জাগ দেয়ার জায়গা নেই। বৃষ্টি না হলে গ্রামের গর্তে স্যালোমেশিন দিয়ে পানি উঠিয়ে পাট জাগ দিতে হবে। পাট পচানোর সমস্যার কারণে এবার লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। একই উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক গোলাম মল্লিক বলেন, এবার নিচু জমিতে পানি না থাকার কারণে নসিমন ভাড়া করে ভৈরব নদে পাট নিয়ে যেতে হবে। আবার পাট পচানোর পর নিয়ে আসতে হবে। এমনিতে এ বছর পাটের বাজার ভাল নয়। জমি তৈরি, পাট বীজ বপন, সার, বীজসহ পাট ঘরে তুলতে এবার ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা ব্যয় হবে। তার ৪ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ আছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চাষি পাটের ন্যায্য দাম পান না। তাদের ঘরের পাট বিক্রি হওয়ার পর পাটের দাম বাড়ে। তিনি আরো বলেন, গত বছর পাটের দাম ভাল থাকলেও চাষিরা ওই দাম পাননি। জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, তিনি ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। এ বছর পানির সঙ্কট আছে। স্যালোমেশিন দিয়ে পানি তুলে পাট পচাতে হয়েছে। যেখানে নদী আছে সেখানে খরচ কম হয়। অনেক চাষি তাদের জমির পাট কেটে প্রতি আঁটি ৬ টাকা ব্যয় করে অন্যের জমিতে পাট জাগ দিচ্ছেন। এরপর পাটের দাম চাষি না পেলে তারা বিকল্প আবাদে ঝুঁকবেন। এজন্য পাট চাষিদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্য দামে প্রকৃত পাট চাষিদের কাছ থেকে পাট কেনা প্রয়োজন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, পাট চাষিরা তাদের জমির পাট কাটতে শুরু করেছেন। চুয়াডাঙ্গায় বড় সমস্যা পাট পচানোর পানির অভাব। পানির অভাবে চাষিরা ভালভাবে পাট পচাতে পারেন না। আমরা চাষিদের কম ব্যয়ে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে পাটের আঁশের মানও ভাল হয়। ভাল মানের পাট উৎপাদন করতে পারলে দামও ভাল পাওয়া যাবে। এতে তারা লাভবান হবেন।