ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে করোনা-লকডাউনে ফুল চাষিদের মাথায় হাত

0

শিপলু জামান, কালীগঞ্জ( ঝিনাইদহ) ॥ মহামারি করোনার কারণে দফায় দফায় লকডাউন, বিধিনিষেধসহ নানা নামে সরকারি সিদ্ধান্তে ব্যবসা বন্ধ তাই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায় ফুল চাষিদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ২০২০ সালে মার্চে করোনা ধরা পড়ার পর প্রথমবার লকডাউনে যে ক্ষতি হয়েছিল পরে তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ফুল চাষিরা। কিন্তু বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে কারণে মাসাধিককাল ফুল বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন জেলার ফুল চাষিরা। পচনশীল বস্তু তাই ক্ষেতেও রাখা যাচ্ছে না ফুল চাষিরা এবার ফুল কেটে ক্ষেত থেকে ফেলে দিচ্ছেন। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছেন।
তথ্য মতে, ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছিল। এরমধ্যে গাঁদা ১১৩ হেক্টর ও রজনীগন্ধা ২৪ হেক্টর বাকি জমিতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিলো ২৪৫ হেক্টর। সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে।
স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখে ফুল বিক্রি করতে না পারায় এ অঞ্চলের চাষি ও ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি। ফুল বিক্রি করতে না পারায় ফুলক্ষেত গরুও ছাগল দিয়ে খাওয়াতেও হয়েছে।
করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসার পর আবারো চাষিরা নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার স্বপ্ন নিয়ে ফুল বিক্রি শুরুও করেছিলেন। দফায় দফায় লকডাউন, বিধি নিষেধের কারণে ফুল চাষিদের সে স্বপ্নও দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সবচেয়ে বড় ফুলচাষি টিপু সুলতান জানান, তিনি ১৬ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছিলেন। ৬ বিঘা জারবেরা, ৪ বিঘা থাই গোলাপ, ৬ বিঘায় রয়েছে রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুল। কিন্তু বাজার –শপিংমল- অনুষ্ঠানাদি ব্ন্ধ থাকায় প্রতিদিন ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকার জারবেরা ফুল কেটে ফেলতে হচ্ছে, থাই গোলাপ কেটে ফেলতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ও অন্যান্য ফুল কাটতে হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকার। তার ফুল ক্ষেতে প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে তাদের দিতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
ঘিঘাটি গ্রামের অনোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউনে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষেতের ফুল তুলে একেবারেই বাজারে বিক্রি করতে পারছিলাম না, তাই সব গাছ কেটে ফেলি। এতে আমার লোকসান হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। এবার আবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম কিন্তু আবারো করোনা আমাদের সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়েছে।
সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া এলাকা বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি লিটন হোসেন জানান, এবছর আমার দুই বিঘা জমিতে লাল ও হলুদ গোলাপের চাষ ছিল। এ ছাড়া প্রায় ৫ বিঘা জমিতে রয়েছে বিদেশি ফুল জারবেরা। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার গোলাপ ও দুই হাজার জারবেরা ফুল তুলতাম। প্রতিটি ফুল গড় ৫ টাকা করে বিক্রি হতো। কিন্তু করোনার কারণে কোনো বেচা বিক্রি নেই।
গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানালেন, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ফুল গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুল পাঠানো হতো, বিশেষ করে দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না বাজারে। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে সাজানো হতো ফুল।
পাঠানো হতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম,বরিশাল, সিলেটসহদেশের বিভিন্ন স্থানে। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে কারণে এখন সেটা হচ্ছে না। কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে বলেও জানান ফুল চাষিরা।