স্ত্রীর বিরুদ্ধে জিডি করার পর শ্বশুর বাড়িতে প্রবাসী স্বামীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের অভয়নগর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে ঈদের দাওয়াত খেতে যাওয়ার পর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে শরিফুল ইসলাম (৪০) নামে এক প্রবাসীর। স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় টাকা ও স্বর্ণাংলকার চুরির অভিযোগে জিডি করার ২৭ দিন পর এ ঘটনা ঘটেছে। মৃতের স্বজনদের দাবি স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে।
শরিফুল ইসলাম শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের আবু হানিফের পুত্র। তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। কয়েক মাস আগে দেশে আসেন। মৃতের ফুফাতো ভাই একই গ্রামের কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শরিফুল ইসলামকে দাওয়াত করে তার শ্বশুর আবুল হোসেন অভয়নগরের শংকরপাশা গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার শরিফুল ইসলাম শ্বশুর বাড়ি যান। পরের দিন শুক্রবার তার স্ত্রী শিল্পী খাতুনকে নিয়ে সেখানে সালিশ হয়। এরপর গতকাল সকালে ঘরের ভেতর খাটের ওপর শরিফুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার গলায় নখের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। অভয়নগর থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করলে পুলিশ গতকাল সকালে শ্বশুর আবুল হোসেনের ঘর থেকে শরিফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ সময় পুলিশের সহায়তায় মায়ের সাথে থাকা শরিফুলের একমাত্র ছেলে রিয়াদ হাসানকে কামরুল ইসলাম তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।
কামরুল ইসলাম আরো জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ ছিলেন শরিফুল ইসলাম। আর স্ত্রী শিল্পী খাতুন শ্বশুরবাড়ি অবস্থান না করে বসবাস করতেন শংকরপাশা গ্রামে পিত্রালয়ে। শরিফুল ইসলাম বিদেশ থেকে বাড়ি আসার পর শিল্পী খাতুন স্বামী গৃহে যান। বিদেশে থাকাকালীন স্ত্রীর কাছে ৭ লাখ টাকা মূল্যের ১০ ভরি স্বর্ণাংলকার ও নগদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠান। এর হিসেব চাইলে স্ত্রী শিল্পী খাতুন স্বামীকে কোন হিসেব দিতে পারেননি। তখন শিল্পী খাতুন শ্বশুর বাড়ি থেকে পালানোর জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। গত ২৯ জুন সকাল ৯টার দিকে শরিফুল ইসলাম গরুর জন্য মাঠে ঘাস কাটতে গেলে শিল্পী খাতুন ছেলে রিয়াদ হাসানকে নিয়ে স্বামীর অজান্তে পিত্রালয়ে চলে যান। ওইদিন শরিফুল তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শার্শা থানায় জিডি করেন। জিডি নং-১১৪৫।
স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, তার স্বামী মালয়েশিয়ায় একটি কোম্পানিতে টাইল্স মিস্ত্রির কাজ করতেন। এক সপ্তাহ আগে ঈদের ছুটিতে দেশে ফেরেন। নিজ গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন শেষে অভয়নগরে বেড়াতে আসেন। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ২ টা পর্যন্ত ছেলে সিয়ামকে নিয়ে ঘরের মধ্যে ছিলেন তারা। এক পর্যায়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে শিল্পী ঘরের বাইরে বারান্দায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাতে ঘরে গিয়ে ডাবার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শরিফুলের দেহ দেখে চিৎকার করেন। পরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যেদের সহযোগিতায় মরদেহ নামিয়ে বিছানায় রাখা হয়।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ওসি একেএম শামীম হোসেন বলেন, শংকরপাশা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে শরিফুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায়। ঘরের আড়ার সাথে তার গলায় ফাঁস দেয়া ছিল। একেএম শামীম হোসেন আরো বলেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।