কুরবানী হোক পশুত্বের

0

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব আমেজের মধ্য দিয়ে আগামীকাল বুধবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে কোরবানির প্রচলন শুরু হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ওপর নির্দেশ ছিল তার প্রিয়পুত্র কোরবানির বা উৎসর্গের। তিনি ছুরি চালিয়েছিলেন একান্ত প্রিয় শিশুপুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) এর গলায়। আল্লাহপাকের উদ্দেশ্যে পিতা-পুত্রের ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত। আল্লাহ খুশি হন। আল্লাহর কুদরতে পুত্রের বদলে কোরবানি হয় পশু। আল্লাহর সন্তোষ্টিতে প্রিয়বস্তু উৎসর্গের চরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হযরত ইব্রাহিম (আ.) আর ধৈর্য্যরে পরম পরীক্ষায় পাস করেন হযরত ইসমাঈল (আ.)। এ অনন্য ত্যাগের মহিমাকে পালনীয় করে রাখা হয়েছে ঈদে পশু কেরবানির মাধ্যমে।
ঈদুল আযহার একদিকে ত্যাগের পরীক্ষা, অন্যদিকে আনন্দের উৎসব। পশু কোরবানি দেয়া সামর্থবান মুসলমানের উপর ওয়াজিব। পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগ আর উৎসর্গের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। কোরবানি দেয়া পশুর রক্ত-মাংস কিছুই স্রষ্টার কাছে পৌঁছে না, শুধু পৌঁছে তাকওয়া। অনেক মুসলিম এটি বুঝতে না পেরে ত্যাগের উৎসবকে ভোগ আর প্রদর্শনীয় মহড়ায় পরিণত করে। অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সর্বোচ্চ দামে কোরবানির বড় পশু কেনাটা অর্থ-বিত্তের উৎকট প্রদর্শনী ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটি ধর্ম ও ত্যাগ কোনটিই নয়। ভোগ আর প্রদর্শনী। বিত্তের প্রতিযোগিতা নয়, বৈভবের প্রদর্শনী নয়, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে মনের ভেতরের কোরবানি করাই হলো আসল কোরবানি। পশু জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে মনের পশুকে ও কোরবানি দিতে পারলেই ত্যাগের পরীক্ষায় পাস করে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
এবার যখন সমগ্র মুসলিমদের দুয়ারে ঈদুল আযহা এসেছে তখন বিশ্বজুড়ে চলছে করোনার রাজত্ব। করোনা মহামারী আমাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। পুুঁজিবাদী সমাজে ধনীরা সাধারণত মুক্ত স্বাধীন থাকে, কিন্তু করোনার ভয়, আতঙ্কে ধনীরাও এখন ঘরবন্দী জীবন যাপন করছে। অদৃশ্য করোনা ধনী-গরিব সবারই স্বাধীনতা হরণ করেছে। উৎসব আনন্দ সবই আজ সীমিত বিধিবদ্ধ। চারিদিকে মৃত্যুর খবর, কান্নার রোল, ঘরে ঘরে অক্সিজেনের আহাকার। ঈদ আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। দিনের পর দিন কঠোর লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে স্বাভাবিক কামনা বন্ধ বিপর্যস্ত হয়েছে ম্লান করেছে সব আনন্দ। তবুও সময় তো থেমে থাকে না, সময়ের পথ বেয়ে আসছে ঈদুল আযহা। উৎসব মানুষকে আত্মকেন্দ্রিতার বলয় থেকে বের করে মিলনমেলায় মিলিয়ে দেয় কিন্তু এখন সে মিলনে বাধ সেধেছে কোভিড-১৯। সামাজিক দূরত্ব মানুষের মিলনকে সীমিত করে দিয়েছে। মানুষ নতুন স্বাভাবিকতায় নতুন রীতিতে উৎসব উদযাপনের চেষ্টা করছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ঈদুল আযহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় শেষে মহান স্রষ্টার কাছে যে বিশেষ প্রার্থনা জানাবেন তা অবশ্যই করোনা নামক গন্ধেমুক্ত নতুন বিশ্ব। মহান স্রস্টা দেযন, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহার পাশাপাশি সমগ্র মানব জাতিকে এই অদৃশ্য শক্তির হাত থেকে ক্ষা করেন। এ প্রার্থনা আমরাও করবো। করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। লোকসমাজের সকল সহকারী ও শুভাকাক্সিক্ষর জন্য কামনা করছি করোনামুক্ত জীবন। একই সাথে কামনা করছি গণতন্ত্রের মুক্তির কামনা করছি, পশুত্বের কুরবানী।