করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত কমলেও সংক্রমণের বড় ঝুঁকিতে এখন যশোরের ঈদের বাজার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত কমছে যশোরে। গত দুদিন জেলায় মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা একটু কম ছিলো। শুক্রবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ও উপসর্গে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় চার জন ও উপসর্গ নিয়ে এক জন মারা গেছেন। জেলায় এই সময়ে ২৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে করোনা সংক্রমণের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে লকডাউনের শিথিলতার দ্বিতীয় দিনে যশোরের বাজারগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এতে স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষার পরিবর্তে চরম হুমকি হয়ে দেখা দেয়। জেলা প্রশাসন বলছে, সংক্রমণ রোধে লকডাউন শিথিল করা হলেও বাইরে যারা বের হবে তাদের অবশ্যই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোরে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার বৃহস্পতিবারের চেয়ে কমেছে। এর আগের দিন করোনায় ও উপসর্গে সাত জনের মৃত্যু হয়। আর গতকাল শুক্রবার করোনা শনাক্তের হার ২৫ দশমিক০৫ শতাংশ।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, যশোর জেনারেল হাসপাতালের রেড জোনে ১৫৩ ও ইয়েলো জোনে ৪৭ জন ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় রেড জোনে নতুন ভর্তি ২৯ ও ইয়েলো জোনে ২৮ জন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ৫৮৪টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া জিন এক্সপার্টে ১১টি নমুনায় ২জনের এবং র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে ৩৩৯ নমুনায় ৭৫ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় ৯৩৪ নমুনায় গতকাল ২৩৪ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মিডিয়া ফোকাল পারসন ডা. রেহনেওয়াজ নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সংক্রমণ ও মৃতের হার বিবেচনায় গত দুদিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা কম। আশা করছি সামনে পরিস্থিতি আরও ভালো দিকের যাবে।
এদিকে করোনা মহামারির এ পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনায় লকডাউন শিথিলের পর থেকে জেলার সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। জেলার শহর ছাড়াও বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় চরম আকার ধারণ করেছে। লকডাউনের শিথিলের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় যশোরের বাজারে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
শুক্রবার যশোর এইচএমএম রোড, কাপুড়িয়াপট্টি, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, মুজিব সড়ক এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সেখানে ক্রেতাদের উপস্থিতিতে পাঁ ফেলার জায়গা নেই। প্রতিটি দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতারা পণ্য ক্রয় বিক্রয় নিয়ে ব্যস্ত। করোনা সংক্রমণের ভয় বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো কিছুই ছিলোনা তাদের মাঝে। দোকানিরা বলেন, দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। ঈদকে সামনে রেখে দোকান খুলে দেওয়ায় মানুষ বাজারে আসতে শুরু করেছে। সামনে আরও বাড়বে বলে তারা জানান।
ক্রেতারা জানান, করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার মাঝেও তাদের বাজারে আসতে হচ্ছে। পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাদের আসা। তবে এক সাথে বেশি লোকের উপস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, সরকার লকডাউন শিথিল করলেও মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সিরিয়াস রয়েছে। যশোর জেলা প্রশাসনও এরই ধারবাহিকতায় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মানুষকে বাধ্য করতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করার জন্য আমরা অনেক আগে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছি। এরপরও যদি মানুষ সচেতন না হয় তাহলে দুঃখজনক।