ভবিতব্য কোন দিকে ?

0

যত ভালো ও শুভ কাজ আমরা করব তা ভবিষ্যতে নিয়ে যাবে শিশুরা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমাদের জন্য ভালো সংবাদ খুব কম রয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সৃষ্ট অবক্ষয় সমাজ ও পরিবারিক জীবনে বর্ধিত মাত্রায় পড়ছে। চার দিকে লোভলালসার চর্চায় শেষ পর্যন্ত শিকার হচ্ছে শিশুরা।
শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে খুনের ঘটনা দেশে ক্রমবর্ধমান। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের হিসাবে চলতি বছরে প্রথম ছয় মাসে শিশুদের প্রতি এক হাজার ৩৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরে প্রথম ছয় মাসে এ ধরনের সহিংসতার সংখ্যা ছিল ৯৭৭টি।
শিশুদের প্রতি সহিংসতার মধ্যে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ও অপহরণ উল্লেখযোগ্য। মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের বিরুদ্ধে এসব অপরাধের মাত্রা বেশ কয়েক বছর ঊর্ধ্বগামী। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। গত বছরের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে ট্রাইব্যুনালে ৩০ হাজার ২৭২টি মামলা হয়েছে। এ বিপুল মামলার বিপরীতে কতটির বিচার সম্পন্ন হয়েছে সে ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক খবর নেই। সহযোগী এক দৈনিকে শিশু নির্যাতন নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে সমাজবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের বর্ধমান প্রবণতায় বিচারের দীর্ঘসূত্রতাকে দায়ী করেছেন।
পরিবার ও সমাজে দ্রুত অবক্ষয়ের বিস্তার হচ্ছে। এর কারণ নিহিত রয়েছে রাজনৈতিক ব্যবস্থায়। প্রশাসনে দুর্নীতি অনিয়ম আশকারা পাচ্ছে। পদ-পদবির মালিক হওয়া ও পদাবনতি ঘটানোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নীতি-নৈতিকতা কোনো মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। ফলে একজন নীতিবান যখন তিরস্কৃত হন, পদাবনতির শিকার হন, আবার একজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি পাচ্ছেন পদোন্নতি। এ কারণে সমাজে ও পরিবারে বিস্তৃতি ঘটছে লোভলালসার, যার সহজ শিকার হচ্ছে শিশুরা। মাদক ও প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারকেও বিশেষজ্ঞরা শিশু নির্যাতনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
শিশুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার দু’টি দিক। এক দিকে অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাচ্ছে না। অর্থাৎ বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের গ্রাস করেছে। অন্য দিকটা হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত অস্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা। এ ব্যবস্থা আবার পূর্ববর্তী অব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে অবক্ষয়কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এ কথা বলা যায়, চলমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে আমরা অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি প্রজন্ম পাবো। যারা বড় হয়ে অবক্ষয়কে আরো বাড়িয়ে তুলবে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। যেকোনোভাবে হোক শিশুদের ওপর নির্যাতন ও নৃশংসতা রোধ করতে হবে।