গ্রামে সংক্রমণে বিপজ্জনক পরিস্থিতি মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে যশোরে হাসপাতালে শয্যা সংকট

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শহর থেকে গ্রাম সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। যশোর জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে রেকর্ড ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় সাতজন ও উপসর্গ নিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও করোনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ায় সব মহলে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক জনসচেতনতা মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহনেওয়াজ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৫৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯৫ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে ২৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে সাতজনের নমুনা পরীক্ষা করে দু জনের ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৩২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
এদিন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনো নমুনা পাঠানো হয়নি বলে তিনি জানান। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ৩৪ শতাংশ হলেও এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৯। জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ২৩২ জন। সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ৪৬৯ জন।
রবিবারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১৪০টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২১৬ জন। এর আগে শনিবার (৩ জুলাই) আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে মারা যান ১৪ জন।
রবিবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে সাতজন জন মারা গেছেন তারা হলেন, যশোর সদর উপজেলার ছোট মেঘলার মকলেছুর রহমানের স্ত্রী বেগম (৬০), ঝিনাইদহ উপজেলার মহেশপুর উপজেলার একতারপুর গ্রামের জবেদ আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৬৫), ঝিনাদহের কালীগঞ্জের গাবতলাপাড়ার তবারক আলীর ছেলে মোবাছের আলী (৪৩), একই উপজেলার আকামুন্দিয়া গ্রামের আকবর আলীর স্ত্রী হামিদা খাতুন (৭৫), চুয়াডাঙ্গার জীবন নগরের মুনছুর আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৭০), যশোর সদরের বেজপাড়ার মজনু শেখের স্ত্রী সখিনা বেগম (৬০) ও যশোরের মনিরামপুরের দেবিদাসপুরের গোলাম মোস্তফার ছেলে মিজানুর রহমান (৪২)।
অপরদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন , ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের শুভ মিয়ার ছেলে এম এ হক (৮৪), চৌগাছার ফুলসারা গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে তোফাজ্জেল (৭৫) অভয়নগরের নওয়াপাড়ার মাওলা বক্সের ছেলে আব্দুল লতিফ (৭০), মনিরামপুরের বজরুল হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫৫), যশোর সদরের আরবপুরের মৃত মসলেমের ছেলে অজিত বিশ্বাস (৬৫), যশোর সদরের মনহরদি গ্রামের ইসমাইলের ছেলে ইউনুছ (৬৫), একই উপজেলার ভেকুটিয়ার চেরাক আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম (৬০), উপশহর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৮) ও মনিরামপুরের কুয়াদা গ্রামের আয়েশা বেগম (৭৫)। এই ১০ জনই করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। বাকি সাতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন সাতজন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। যশোর হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত রেড ওজানে এখন ভর্তি আছেন ১২১ জন। এখানে শয্যা সংখ্যা ১১৮টি। তবে করোনা রোগের উপসর্গ নিয়ে ইয়েলো জোনে ভর্তি রয়েছেন ৯৫ জন। এখানে শয্যা সংখ্যা মাত্র ২২টি। অর্থাৎ রেড ও ইয়েলো জোনে মোট ১৪০টি শয্যা থাকলেও রোগী ভর্তি রয়েছেন ২১৬ জন। হাসপাতালের রেড জোনে ৪০টি শয্যা বাড়ানোর কাজ শেষ পর্যায়ে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, যশোরে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও রয়েছেন। প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা সম্মিলিতভাবে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন।