মনিরামপুরে করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফনে কাজ করছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন

0

মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অথবা করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করলে আতঙ্কে যখন স্বজনরাও মৃতদেহ দাফন অথবা সৎকার করতে ভয় পান, তখন বিনা খরচে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মৃতদেহ দাফন করে চলেছে ‘তাকওয়া ফাউন্ডেশন’ নামে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন। সংগঠনটির ১৬ সদস্যের মধ্যে দুজন নারীও রয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব যুবক-যুবতী একের পর এক করোনা আক্রান্ত অথবা উপসর্গে মৃত্যুবরণ করা মৃতদেহ সৎকার করে গণমানুষের মন জয় করেছেন।
মনিরামপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও করোনার উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতদেহের সৎকার নিয়ে স্বজনদের মধ্যে দেখা দেয় করোনা আতঙ্ক। ফলে মৃতদেহ সৎকার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন পরিবারের লোকজনসহ স্বজনরা। আর এ সময় মানবতার সেবায় এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃতদেহ সৎকার করেন। মল্লিকপুর গ্রামের মোবারক মোড়লের মেয়ে আছিরোন বেগম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের পর তার পরিবারের লোকজন মৃতদেহ দাফন নিয়ে চরম আতঙ্কে পড়েন। আর এ খবর পেয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী নাসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে সাইয়েদাতুন নেছা নজু, মুক্তা খাতুন, মাওলানা ইয়াছিন আশরাফ, মাওলানা হাসান আল মামুনসহ ১০ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মৃতদেহ গোসলের পর দাফনের ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয়, মনিরামপুর উপজেলার ঘুঘুদাহ গ্রামের দেবেন্দ্র নাথের করোনায় মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ সৎকারে পরিবারের লোকজনসহ এলাকার কোন ব্যক্তি এগিয়ে না আসলেও খবর পেয়ে তাকওয়ার এই যুবকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী নাসিম উদ্দিন খান ও আশরাফ ইয়াছিন জানান, তারা বিনা খরচে মানবতার সেবাই নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর মৃতদেহ সৎকার করতে তারা কারোর কাছ থেকে কোন অর্থকড়ি গ্রহণ করেন না। এ ক্ষেত্রে যদি হৃদয়বান ব্যক্তিরা পিপিইসহ করোনা সরঞ্জামাদি দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন তবে সেটা তারা গ্রহণ করেন। আশরাফ ইয়াছিন জানান, এ পর্যন্ত তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) এর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এমএ ওয়াহাব. বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বাবু, লতিফুর রহমান বাবলু, হাসমত আলী, মৎস্য ব্যবসায়ী হাশেম আলী, গৃহবধূ আছিরোন বেগম, জেসমিন আরা বেগম, দেবেন্দ্র নাথ ঘোষালসহ অন্তত ২০ জন এবং করোনা উপসর্গে মৃত্যুবরণ করা শতাধিক মৃতদেহ বিনা খরচে সৎকার করেছেন। নাছিম উদ্দিন খান জানান, মাঝে মধ্যে তাদের করোনা সুরক্ষা সরঞ্জামাদির সঙ্কট দেখা দেয়। অবশ্য ইতিমধ্যে যশোর সিটি প্লাজার চেয়ারম্যান এসএম ইয়াকুব আলী, বিএসএমএমইউ’র মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদী হাসানসহ হৃদয়বান ব্যক্তিরা তাদেরকে করোনা সুরক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেন। তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের নন্দিত এ কার্যক্রমকে অভিনন্দন জানিয়ে সিটি প্লাজার চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী আরও করোনা সরাঞ্জামাদি সরবরাহের কথা জানান। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তুলসি বসু জানান, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের মানবিক কার্যক্রম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফাউন্ডেশনের সদস্যদের এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, চেষ্টা চলছে তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার।