ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : দুশ্চিন্তা কয়রার দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ খুলনার উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম বেড়িবাঁধ। গত এক যুগের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ফণী, বুলবুল এবং সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন আম্ফানে তছনছ করে দেয় দক্ষিণ উপকূল। জেলার কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের চৌদ্দটি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা নোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়। বিধ্বস্ত হয় হাজার হাজার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, গাছপালা, গবাদিপশু, মৎস্যঘের ও জমির ফসল। সর্বস্বান্ত হয় জনপদের মানুষ। সরকারের ব্যাপক সহযোগিতায় বিধ্বস্ত বাঁধগুলো মেরামত চলমান। এর মধ্যে কাটা ঘা শুকাতে না শুকাতেই আরও একটি বিপর্যয়ের আশঙ্কায় চিন্তিত উপকূলবাসী। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
খুলনার কয়রা উপজেলার চারদিকে নদীবেষ্টিত। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ১৩–১৪/২ ও ১৪/১ দুটি পোল্ডারের মোট ১১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ-ই ভরসা উপকূলবাসীর। দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া বিরূপ হলে পানির চাপে কোথাও কোথাও ভেঙে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। উপকূলীয় জনপদের বেশ কিছু জায়গা রূপ নেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। মাঝে মধ্যে গ্রীষ্ম মৌসুমেও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢোকে। কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশিষ্ট সমাজসেবক এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কয়রার ২০ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুই হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করছে। জোড়াতালির বেড়িবাঁধ, দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব এখনো দৃশ্যমান। এর মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে আতঙ্ক বেড়ে গেছে এসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে কয়রা সদর ইউনিয়নের দু’নম্বর কয়রা ক্লোজার-এর দক্ষিণ পার্শ্ব হতে উত্তর বেদকাশী স্লুইচগেট পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার, মদিনাবা লঞ্চ ঘাট থেকে লোকা পর্যন্ত এক কিলোমিটার, কাশি খালের গোড়া থেকে কাঠমারচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার, মাটিয়া ভাঙ্গা আধা কিলোমিটার, আংটিহারায় এক কিলোমিটার, বীণাপাণি গাতির ঘেরিতে দুই কিলোমিটার, দশালীয়া থেকে হোগলায় তিনি কিলোমিটার, মহেশ্বরীপুর নয়নীতে আধা কিলোমিটার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। বেড়িবাঁধের যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ সেসব স্থানে পাউবো ও স্থানীয়দের মাধ্যমে সাময়িকভাবে প্রতিরক্ষার কাজ চলমান রয়েছে।’ তবে কয়রা উপজেলা প্রশাসন বলছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় তারা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। শারীরিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ঘূর্ণিঝড়ে কয়রার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম। এরই মধ্যে কয়রাবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনার মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও ১১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। পর্যাপ্ত চাল শুকনা খাবার নিরাপদ পানি ও নগদ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করছেন রেডক্রিসেন্ট, সিপিপি ও বেসরকারি এনজিওর স্বেচ্ছাসেবকরা।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীকে জনগণের জান মাল রক্ষাসহ সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সাহস যোগানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকার ও আমার ব্যক্তিগতভাবে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও পানির ব্যবস্থা রেখেছি।’